কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় পাঠক, আপনারা হয়তো অনেকেই চিন্তা করছেন কিভাবে কোয়েল পাখি পালন করা যায়? কারণ বর্তমানে কোয়েল পাখির চাহিদা ব্যাপক। কোয়েল পালনে বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না স্বল্প জায়গায় কোয়েল পাখি পালন করা যায়। কোয়েল পাখির মাংস ও ডিমের বিভিন্ন পুষ্টি গুণাগুনে ভরপুর। তাই আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

বিভিন্ন পদ্ধতিতে কোয়েল পাখি পালন করা যায়। বর্তমানে কোয়েল পাখি পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। আপনারা যারা কোয়েল পাখি পালন করবেন ভাবছেন তাদের জন্য আমার এই আর্টিকেলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোয়েল পাখি পালন ও অন্যান্য বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে চান। তারা অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

ভূমিকা

কোয়েল পালনে স্বল্প জায়গা ও স্বল্প পুঁজির প্রয়োজন এবং সহজে লালন পালন করা যায় বিধায় দেশে দিন দিন কোয়েলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাঁস-মুরগির পাশাপাশি অথবা হাঁস-মুরগির বিকল্প হিসেবে বর্তমানে মানুষ কোয়েল পালন করতে আগ্রহী হচ্ছে। কোয়েলের দ্রুত বৃদ্ধি হয়, ৫-৬ সপ্তাহ বয়সেই কোয়েল বাজারজাতকরণের উপযুক্ত হয়।

খুব কম বয়সেই (৬-৭ সপ্তাহ) কোয়েল ডিম দিতে শুরু করে। অধিক ডিম দেওয়া, স্বল্প জায়গা ও খাবার চাহিদা এবং রাণীক্ষেত রোগের প্রতি সংবেদনশীল না হওয়ায় হাঁস মুরগির বিকল্প হিসেবে বর্তমানে মানুষ কোয়েল পালন করতে বেশী আগ্রহী হচ্ছে। দেশের কিছু কিছু অঞ্চল যেমন ঢাকা, সাভার, দিনাজপুর ও গাজীপুরে কোয়েলের মাংস ও ডিমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

কোয়েল পাখির বৈশিষ্ট্য

বিভিন্ন প্রকার জাত অনুসারে কোয়েল পাখির বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কোয়েল পাখি আকারে সাধারণত ছোট হয় তাই এদের দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। কোয়েল পাখির দেহের বৃদ্ধি খুব দ্রুত হয়। কোয়েল পাখির গায়ের রং বাদামী রঙের হয়। এরা সাধারণত খুব কম বয়সে ডিম পাড়ে। ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ হলেই ডিম দেওয়া শুরু করে। অনেকদিন পর্যন্ত ডিম দেয়।

কোয়েল পাখি থেকে মাংস উৎপাদন করা হয় এবং সেটি বাণিজ্যিকভাবেও বাজারজাত করা যায়। কোয়েল পাখির মাংসের তুলনামূলক কম ফ্যাট থাকে। তাই কোয়েল পাখির মাংস যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের জন্য খুবই উপকারী। একটি পূর্ণাঙ্গ কোয়েল পাখির ওজন ১৫০ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়।

সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোয়েল পাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য মাত্র ১৬ দিন থেকে ১৮ দিন লাগে। যেহেতু বাচ্চা ফুটাতে সময় কম লাগে তাই খুব অল্প সময়ে কোয়েল পাখি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করা যায়। এ থেকে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়।

কোয়েল পাখি পালনের সুবিধা

  • হাঁস বা মুরগির খামার করতে যেখানে অনেক বেশি পুঁজি লাগে সেখানে অত্যন্ত কম পুঁজি নিয়ে কোয়েলের খামার শুরু করা যায়।
  • কোয়েলের আকার ক্ষুদ্র বলে এদের লালন পালনের জন্য অনেক জায়গার প্রয়োজন হয় না। ছোট আকারের একটি খাঁচাতেই কোয়েল পালন করা যায়। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মুরগির জন্য যে পরিমাণ জায়গা প্রয়োজন হয় সেই একই জায়গায় কমপক্ষে আটটি কোয়েল পালন করা যায়।
  • একটি হাঁস বা মুরগি থেকে ডিম পেতে কমপক্ষে ১৮-২০ সপ্তাহ সময় লাগে সেখানে ৬-৭ সপ্তাহ বয়সে কোয়েল ডিম দেয়া শুরু করে।
  • একটি উন্নত জাতের কোয়েল পাখি ১ বছরে ২৫০ থেকে ৩০০ টি ডিম দিতে পারে। কোয়েল পাখির ডিম উর্বর প্রকৃতির হয়। যার ফলে প্রতিটি ডিম থেকে প্রায় বাচ্চা উৎপাদন করা সম্ভব হয়।
  • কোয়েল পাখির রোগ-ব্যাধি কম থাকায় এদের জন্য আলাদা কোন চিকিৎসা ব্যবস্থারও তেমন প্রয়োজন হয় না। পক্ষান্তরে, হাঁস-মুরগির প্লেগ, রাণীক্ষেত, এভিয়ান, গামবোরা রোগ হয়ে থাকে যাতে চিকিৎসা খরচ অনেক বেশি হয়।
  • কোয়েল পাখির ডিম ও মাংস খেতে খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। মুরগির ডিমের পুষ্টির সাথে কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টির তুলনা করা যায়।
  • কোয়েল পাখি কম পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে তবুও এদের দেহ দ্রুত বৃদ্ধি হয়। এদের খাদ্যের ঘাটতি মেটানোর জন্য দিনে ২০ থেকে ৩০ গ্রাম খাদ্য দিলেই খাদ্য চাহিদা মিটে যায়।
  • কোয়েল পাখির ১৭-১৮ দিনের মধ্যেই বাচ্চা ফুটে বের হয়। এই বাচ্চা মাত্র ৬ থেকে ৭ সপ্তাহে একটি পরিণত কোয়েলে রূপান্তরিত হয়।
  • কোয়েল পাখি থেকে মাংস উৎপাদন করা হয় এবং সেটি বাণিজ্যিকভাবেও বাজারজাত করা যায়। কোয়েল পাখির মাংসের তুলনামূলক কম ফ্যাট থাকে।

কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি

বর্তমানে কোয়েল পাখি পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। কোয়েল পাখি পালন করে দেশে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। যুবসমাজ কোয়েল পাখির পালনে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। কোয়েল পাখির বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে। বাংলাদেশে কোয়েল পাখি ডিম ও মাংসের চাহিদা ব্যাপক। কোয়েল খাঁচা অথবা খামারে পালন করা যায়।

খাঁচায় কোয়েল পাখি পালনে জায়গার পরিমাণ কম লাগে। আলাদা করে কোন বাসস্থান তৈরি করতে হয় না। শহর অঞ্চলে খাঁচায় কোয়েল পালন পদ্ধতিটা বেশি হয়। কেননা বাসার ছাঁদ, বাসার ব্যালকনিতে অল্প পরিমাণে খাচায় কোয়েল পালন করা যায়।

কোয়েল পাখির বাসস্থান

পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচল করে এমন ঘর কোয়েল পালনের জন্য উপযোগী। লিটার বা কেইজ উভয় পদ্ধতিতে কোয়েল পালন করা যায়। তবে বাচ্চা অবস্থায় প্রথম দুই সপ্তাহ কেইজে রেখে পালন করা উত্তম। কারণ কোয়েলের জন্য এ সময়টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বাচ্চা অবস্থায় প্রথম দুই সপ্তাহ প্রতিটি কোয়েলের জন্য ৭৫ বর্গ সে.মি. জায়গা প্রয়োজন।

অন্যদিকে প্রতিটি বয়ষ্ক কোয়েলের জন্য খাঁচায় ১৫০ বর্গ সে.মি. এবং মেঝেতে ২৫০ বর্গ সে.মি. জায়গার প্রয়োজন। খাঁচায় কোয়েল পালনের ক্ষেত্রে তিন সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত খাঁচার জালের ফাঁক ৩ মি.মি.×৩ মি.মি. এবং তিন সপ্তাহের পর ৫ মি.মি×৫ মি.মি. আকারের হওয়া প্রয়োজন।

কোয়েল পাখির ব্রুডিং

কোয়েলের ব্রুডিং ব্যবস্থাপনা অনেকটা মুরগি পালনের মতই। তাই কোয়েল পালনের জন্য আলাদা কোন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। হাঁস-মুরগি পালনে যাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা সহজেই কোয়েল পালন করতে পারে। এক দিনের বাচ্চা কোয়েলের ওজন সাধারণত: ৫-৭ গ্রাম। ব্রুডিং ঘরে বাচ্চা তোলার পর গ্লুকোজ মিশ্রিত পানি দিতে হয়।

প্রথম দুই সপ্তাহ খাঁচায় পালন করে পরে খাঁচায় বা মেঝেতে কোয়েল পালন করা যায়। কোয়েলের বাচ্চা ফুটার প্রথম দুই সপ্তাহ সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনের অধিক বা কম তাপমাত্রা কোয়েলের বাচ্চার মৃত্যু ঘটাতে পারে। ব্রুডিং পর্যায়ে কোয়েলের ঘরে যে তাপমাত্রা প্রয়োজন। ব্রুডিং ঘরে বাচ্চা ছাড়ার পূর্বেই ঘরের তাপমাত্রা ৯০-৯৫০ ফা. রাখতে হয়।

ঘরে বাচ্চা ছাড়ার পূর্বে পানি খাইয়ে ছাড়তে হয়, এতে করে বাচ্চা পানির পাত্রের সাথে পরিচিত হতে পারে। থার্মোমিটার দিয়ে ঘরের তাপমাত্রা নির্ণয় করে এবং বাচ্চার অবস্থা বুঝে তাপমাত্রা কমবেশি করতে হয়। সাধারণত: প্রতি সপ্তাহে ৫০ ফা. করে তাপমাত্রা কমিয়ে ঘরের তাপমাত্রা বজায় রাখা হয়।

কোয়েল পাখির খাবার

ডিম বা মাংসের জন্য কোয়েল পাখির খাদ্যে যে পুষ্টি উপাদান থাকা প্রয়োজন তা হাঁস-মুরগির চেয়ে একটু ভিন্ন হতে হয়। একটি পরিপূর্ণ কোয়েল প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ গ্রাম খাবার গ্রহণ করে। যেখানে একটি হাঁস প্রতিদিন ১৩০ থেকে ১৫০ গ্রাম ও একটি মুরগি ১১০ থেকে ১২০ গ্রাম খাবার গ্রহণ করে। কোয়েল পাখির বাচ্চা, বাড়ন্ত কোয়েল বা প্রজনন কাজে ব্যবহৃত স্ট্যান্ডার্ড রেশন বাজারে সহজে পাওয়া যায় না। বয়স অনুসারে কোয়েলের রেশন কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
  • স্টাটারঃ কোয়েল এর বয়স ০-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত স্টাটার পর্যায় বলা হয়। স্টাটার পর্যায়ে প্রতি কেজি খাবারে শতকরা ২৭ ভাগ প্রোটিন এবং ২৮০০ কিলোক্যালরি বিপাকীয় শক্তি প্রয়োজন।
  • গ্রোয়ারঃ কোয়েল এর বয়স ০৪-০৫ সপ্তাহ পর্যন্ত গ্রোয়ার পর্যায় বলা হয়। গ্রোয়ার স্টেজে প্রতি কেজি খাবারে শতকরা ২৩ ভাগ প্রোটিন এবং ২৮০০ কিলোক্যালরি বিপাকীয় শক্তি প্রয়োজন।
  • লেয়ার বা ব্রিডারঃ কোয়েল এর বয়স ৬ সপ্তাহ থেকে বিক্রি পর্যন্ত লেয়ার বা ব্রিডার পর্যায় বলা হয়। লেয়ার বা ব্রিডার স্টেজে প্রতি কেজি খাবারে শতকরা ২২-২৪ ভাগ প্রোটিন এবং ২৭০০ কিলোক্যালরি বিপাকীয় শক্তি প্রয়োজন।
ডিম পাড়া অবস্থায় খাবারে ২.৫ থেকে ৩.০% ক্যালসিয়াম দরকার। তবে গরমের সময় তা ৩.৫% হলে ভাল হয়। এতে দেখা যায় যে, স্টাটার পর্যায়ে কোয়েলের খাদ্যে প্রোটিনের পরিমাণ মুরগির খাদ্যের চেয়ে বেশি লাগে। এর মতে জাপানিজ কোয়েলের ডিম পাড়া পর্যায়ে খাবারে ২২.১২% প্রোটিন ও ২৮৮০ কি.ক্যালরি/কি.গ্রা এনার্জি থাকলে তাতে সর্বোচ্চ ফল পাওয়া যায়।

প্রথম দুই সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ফ্লাট ট্রেতে খাবার দিতে হয় যাতে খাবার খেতে কোন অসুবিধা না হয়। তবে প্রথম দুই তিন দিন পেপারে খাবার দেওয়া ভালো। প্রথম সপ্তাহ থেকে দৈনিক প্রতিটি কোয়েলের জন্য পাঁচ গ্রাম করে পরিষ্কার পাত্রে খাবার দিতে হয় এবং ক্রমান্বয়ে প্রতি সপ্তাহে পাঁচ গ্রাম করে খাবার বাড়াতে হয়। একটি পূর্ণবয়স্ক কোয়েলকে দৈনিক ২০-২৫ গ্রাম খাবার দিতে হয়।


সুষম খাদ্যঃ বাড়ন্ত কোয়েল পাখির জন্য সুষম খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। খাদ্য তালিকায় দৈনিক সুষম খাদ্য রাখা প্রয়োজন। সুষম খাদ্য খাদ্য তালিকায় রাখলে কোয়েল পাখির দেহের ওজন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সুষম খাদ্য খাদ্যগুলো হলো-গম ভাঙ্গা, তিলের খৈল, শুটকি মাছের গুঁড়া, ডুমহি কুড়া, ঝিনুক চূর্ণ, খাদ্য লবন ও ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স। উল্লেখিত সুষম খাদ্যগুলো কোয়েল পাখির বয়স অনুসারে খেতে দিতে হবে। যা দেহের মাংস বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

পানির পাত্রঃ কোয়েলকে অবশ্যই সর্বদা পরিষ্কার পানি সরবরাহ করতে হয় এবং পাত্রটি পরিষ্কার হওয়া বাঞ্ছনীয়। সাধারণত: অটোমেটিক নিপল অথবা কাপ ড্রিংকার বা মুরগির জন্য ব্যবহৃত স্বাভাবিক পানির পাত্র কোয়লের জন্য উপযোগী। স্বাভাবিক পানির পাত্রের ক্ষেত্রে ৫০টি কোয়েলের জন্য একটি পাত্র এবং নিপল বা কাপ ড্রিংকারের ক্ষেত্রে পাঁচটি বয়স্ক কোয়েলের জন্য একটি হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। তবে বাচ্চা কোয়েলের জন্য ছোট আকারের এবং পরিপূর্ণ কোয়েলের জন্য বড় পাত্র ব্যবহার করা যায়। পানির জন্য কোয়েল পাখির কোন অসুবিধা না হয় এইদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

কোয়েল পাখির বাচ্চা ফুটানোর পদ্ধতি

প্রাকৃতিক (Natural) এবং কৃত্রিম (Artificial) উভয় উপায়েই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো যায়। সাধারণত কোয়েল ডিমে তা দেয় না তাই প্রাকৃতিক ভাবে বাচ্চা ফুটাতে কুচে মুরগি (Broody hen) দিয়ে ডিমে তা দিতে হয়। কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা ফুটানোর ক্ষেত্রে ইনকিউবেটরের সেটার (Setter) বা হেচারের (Hatcher) ট্রের ডিজাইন ডিমের আকারের উপর ভিত্তি করে তৈরি করতে হয়।

ডিম প্রথম ১৫ দিন সেটিং ট্রেতে এবং বাকী ৩ দিন হেচারে রাখতে হয়। সেটিং-এ থাকা অবস্থায় প্রতি দুই-চার ঘন্টা পরপর ডিম টার্নিং (Turning) করতে হয় যাতে ভ্রুণ (Embryo) খোসার সাথে লেগে না যায়।প্রথম ১৫ দিন ইনকিউবেটরের তাপমাত্রা ৯৮-১০১০ ফা: এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৫০-৬০% এবং পরের তিন দিন ৬০-৭০% রাখা বাঞ্ছনীয়। ডিম বসানোর ১৮ দিনের মাথায় ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে আসে।

খাঁচায় কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি

কোয়েল পাখি খাঁচায় পালন করা যায়। খাঁচায় কোয়েল পাখি পালনের বিভিন্ন ধরনের সুবিধা রয়েছে। যার মধ্যে খাঁচায় কোয়েল পাখি পালনের জন্য বাড়তি কোন জায়গার প্রয়োজন হয় না। স্বল্প খরচে এবং অল্প পরিশ্রমে খাঁচায় কোয়েল পালন করা যায়। বর্তমানে লৈ কোয়েল পালনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কোয়েল পাখির পালনের জন্য বিভিন্ন ধরনের খাঁচা পাওয়া যায়। 

লেয়ার খাঁচা, বর্ডার খাঁচা, বিল্ডার খাঁচা ও বিয়ারিং খাঁচা বাজারে পাওয়া যায়। যদি কোয়েল পালনের জন্য জায়গা স্বল্পতা থাকে তাহলে ব্যাটারি পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। বিভিন্ন প্রকার আকৃতির খাঁচা তৈরি করা যায়। কোয়েল পাখির পরিমাণের উপর নির্ভর করে খাঁচা তৈরি করতে হয়। প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক কোয়েল পাখির জন্য খাঁচায় ১৫০ বর্গ সে.মি. এবং মেঝেতে ২৫০ বর্গ সে.মি. জায়গার প্রয়োজন। 

খাঁচায় কোয়েল পালনের ক্ষেত্রে তিন সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত খাঁচার জালের ফাঁক ৩ মি.মি.×৩ মি.মি. এবং তিন সপ্তাহের পর ৫ মি.মি×৫ মি.মি. আকারের হওয়া প্রয়োজন। এমন ভাবে খাঁচা তৈরি করতে হবে যাতে খাঁচার একপাশে পানির পাত্র ও আরেক পাশে খাবার পাত্র রাখা যায় যাতে কোয়েল সহজে পানি এবং খাবার গ্রহণ করতে পারে।

কোয়েল পাখির জাত

এ পর্যন্ত পৃথিবীতে ১৮ টি জাতের কোয়েল পাখি পাওয়া যায়। মাংস উৎপাদন ও ডিম উৎপাদনের ভিত্তিতে কোয়েল পাখির পৃথক পৃথক জাত আছে। এ সকল জাতের মধ্যে জাপানিজ কোয়েল পালন বেশি হয়। জাত উপজাত ভেদে কোয়েল পাখির ওজন, আকৃতি, রং ও ডিম পাড়ার ভিত্তিতে পার্থক্য হয়ে থাকে। এছাড়াও জাপানিজ লেয়ার কোয়েল জাত হিসেবে বেশি পরিচিত। 

জাপানি কোয়েল দেখতে ছোটখাটো হয়ে থাকে। এ জাতীয় কোয়েলের ঠোঁট ছোট, পা খাটো হয়। ডিমের খোসার রং হালকা বাদামি বর্ণের হয়। এ সকল কোয়েল পাখি বছরে ২৯০ থেকে ৩০০ টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আজকের এই আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আজকের আর্টিকেলটির মধ্যে কোয়েল পাখি পালন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আপনি কিভাবে কোয়েল পাখি পালন করবেন তা আশা করি ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো সঠিক পদ্ধতিতে কোয়েল পালন করলে আপনি ব্যাপকভাবে লাভবান হতে পারবেন।

আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি বিন্দুমাত্র উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিন। আশা করি আজকের এই পোস্টটি আপনি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। আপনার যদি কোন মতামত এবং প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদেরকে জানাতে পারেন। আর হ্যাঁ ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে ভুলবেন না। আপনার প্রতিটা মুহূর্ত সুন্দর হোক-আসসালামু আলাইকুম

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url