কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা অনেকেই ওয়েবসাইটে খোঁজাখুঁজি করেছেন। হয়তো সঠিক তথ্য পাননি। আজকে আর্টিকেলটির মধ্যে কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। সঠিক তথ্য পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ুন।

কোয়েল পাখির ডিমের বিভিন্ন প্রকার উপকারিতা রয়েছে। যা আমরা অনেকেই জানিনা। স্বল্প মূল্যে কোয়েল পাখির ডিম বর্তমানে বাজারে অনেক প্রচলিত।

ভূমিকা

খুব কম বয়সেই (৬-৭ সপ্তাহ) কোয়েল ডিম দিতে শুরু করে। অধিক ডিম দেওয়া, স্বল্প জায়গা ও খাবার চাহিদা এবং রাণীক্ষেত রোগের প্রতি সংবেদনশীল না হওয়ায় হাঁস মুরগির বিকল্প হিসেবে বর্তমানে মানুষ কোয়েল পালন করতে বেশী আগ্রহী হচ্ছে। দেশের কিছু কিছু অঞ্চল যেমন ঢাকা, সাভার, দিনাজপুর ও গাজীপুরে কোয়েলের মাংস ও ডিমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে প্রচুরপুষ্টি গুনাগুন। যা সকল ধরনের মানুষের ক্ষেত্রে খাওয়া উত্তম। বিশেষ করে বাচ্চা ও গর্ভবতী মা পুষ্টির চাহিদা পূরণে কোয়েল পাখির ডিম অতুলনীয়। কোয়েল পাখি ডিমের উপকারিতা অন্যান্য ডিমের তুলনায় বেশি।

কোয়েল পাখির বৈশিষ্ট্য

বিভিন্ন প্রকার জাত অনুসারে কোয়েল পাখির বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কোয়েল পাখি আকারে সাধারণত ছোট হয় তাই এদের দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। কোয়েল পাখির দেহের বৃদ্ধি খুব দ্রুত হয়। কোয়েল পাখির গায়ের রং বাদামী রঙের হয়। এরা সাধারণত খুব কম বয়সে ডিম পাড়ে। ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ হলেই ডিম দেওয়া শুরু করে। অনেকদিন পর্যন্ত ডিম দেয়।

কোয়েল পাখি থেকে মাংস উৎপাদন করা হয় এবং সেটি বাণিজ্যিকভাবেও বাজারজাত করা যায়। কোয়েল পাখির মাংসের তুলনামূলক কম ফ্যাট থাকে। তাই কোয়েল পাখির মাংস যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের জন্য খুবই উপকারী। একটি পূর্ণাঙ্গ কোয়েল পাখির ওজন ১৫০ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়।

সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোয়েল পাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য মাত্র ১৬ দিন থেকে ১৮ দিন লাগে। যেহেতু বাচ্চা ফুটাতে সময় কম লাগে তাই খুব অল্প সময়ে কোয়েল পাখি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করা যায়। এ থেকে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়।

কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা

  • কোয়েল পাখি পালনের উৎপাদন খরচ কম হওয়ার কারণে বর্তমানে ব্যাপক হারে কোয়েল পাখি পালন হচ্ছে। একটি কোয়েল পাখি বছরে অনেক পরিমাণ ডিম দেয়ার কারণে ডিমের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোয়েল পাখির ডিম খেলে মানুষের দেহের ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে।
  • কোয়েল পাখির ডিমে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় মানুষের উচ্চ রক্তচাপকে প্রতিরোধ করে।
  • কোয়েলের ডিম মানুষের শরীরে শক্তির উৎস হিসাবে কাজ করে। কোয়েলের ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও আইরন থাকে যা আমাদের শরীরের এনার্জি খুব তাড়াতাড়ি বাড়িয়ে দিতে কাজ করে।
  • কোয়েল পাখির ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১.৪% যা মুরগির ডিমের তুলনায় সাত ভাগের এক ভাগ। যে সকল মানুষের কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি তাদের কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া উত্তম।
  • কোয়েল পাখির ডিম ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • মানুষের চোখের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন-এ যা প্রচুর পরিমাণে কোয়েল পাখির ডিমে আছে। ডিমের এন্টি অ্যাক্সিডেন্ট চোখের পেশি কে ভালো রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে চোখের বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • মানুষের দেহে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর টক্সিন উপাদান থাকে যা কোয়েল পাখির ডিম খেলে বাইরে বের করতে সাহায্য করে। ফলে মানুষের সাধারণ শারীরিক সমস্যা কম হয়।
  • বাচ্চাদের শারীরিক-মানসিক ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটাতে কোয়েল পাখির ডিম ভূমিকা রাখে। এছাড়াও শিশুদের বিভিন্ন ধরনের রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

কোয়েল পাখির ডিমে কি এলার্জি আছে

আমাদের যাদের এলার্জি জনিত সমস্যা আছে তারা কোন কিছু খাওয়ার আগে প্রথমে চিন্তা করি এই জিনিসটাতে অ্যালার্জি আছে কিনা। এলার্জির জনিত খাবার আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর। কোয়েল পাখির ডিমে বিশেষ ধরনের কোন এলার্জি নেই। মানুষের শরীরে কোয়েল পাখির ডিম এলার্জি জনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তাই নির্ভয়ে কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারেন।

শিশুদের জন্য কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা

কোয়েল পাখির ডিম বাচ্চাদের খাওয়ালে বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায়। কোয়েল পাখির ডিম বিভিন্ন পুষ্টি গুণাগুণ সম্পন্ন। যা বাচ্চাদের শরীরের বিভিন্ন রকম পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। 
  • বাচ্চাদের শারীরিক বিকাশ ও মানসিক বিকাশ বৃদ্ধি করে কোয়েল পাখি ডিমে।
  • বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটাতে কোয়েল পাখির ডিম ভূমিকা রাখে।
  • যে সকল বাচ্চাদের বয়স নয় মাস থেকে এক বছর ওই সকল বাচ্চাদের সপ্তাহে ০২ থেকে ০৩ দিন এক থেকে দুইটি করে ডিম খাওয়ানো যেতে পারে।
  • ১ থেকে তার বেশি বয়সের বাচ্চাদের দিনে দুই থেকে তিনটি ডিম খাওয়ানো যেতে পারে।
  • সতর্কতা হিসেবে যেদিন কোয়েল পাখির ডিম বাচ্চাদের খাওয়ানো হবে ঐদিন অন্য কোন ডিম খাওয়ানো যাবে না।
  • বাচ্চাদের কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতার মধ্যে আরো রয়েছে লম্বা হওয়া, ওজন বৃদ্ধি করা।
  • কোয়েল পাখি ডিমে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। ভিটামিন এ রাতকানা রোগীর জন্য খুবই উপকারী। শিশুদের কোয়েল পাখির ডিম রাতকানা, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগ থেকে রক্ষা করে।
  • কোয়েল পাখি ডিমের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে।
  • এছাড়াও শিশুদের বিভিন্ন ধরনের রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
  • আপনার বাচ্চার যদি কোয়েল পাখির ডিমে এলার্জি থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

গর্ভাবস্থায় কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় মায়েদের প্রচুর পুষ্টির দরকার রয়েছে। আর এই পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য ডিম অতুলনীয়। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডিম রাখা প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় কোয়েল পাখির ডিম উপকারিতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোয়েল পাখির ডিম বিভিন্ন পুষ্টি গুনাগুনে অতুলনীয়। এই ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি। 

অন্যান্য ডিমে থেকে অনেক বেশি ভিটামিন বি১ রয়েছে। গর্ভাবস্থায় একটি মায়ের যে পরিমাণ ভিটামিন, অ্যামাইনো এসিড, মিনারেল প্রয়োজন হয় তা সবগুলো কোয়েল পাখির ডিমে পাওয়া যায়। বর্তমানে কোয়েল পাখির ডিম খুব সস্তা যা ধনী-গরীব সকলেই কিনে খেতে পারে। স্বল্প মূল্যের ডিম তাই এই ডিমের চাহিদা প্রচুর। এই ডিমে আরো রয়েছে ফসফরাস ও আয়রন যা অন্যান্য ডিমে তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি। 

গর্ভ অবস্থায় গর্ভবতী মা কোয়েল পাখির ডিম সিদ্ধ করে খেলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গর্ভবতী মায়েদের ক্যালরির প্রয়োজন হয় কোয়েল পাখির ডিম খেলে গর্ভাবস্থায় ক্যালরির চাহিদা মেটাতে পারে। কোয়েল পাখির ডিমে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপকে প্রতিরোধ করে। কোয়েল পাখির ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১.৪% যা মুরগির ডিমের তুলনায় সাত ভাগের এক ভাগ।

কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টিগুণ

কি ভাবছেন কোয়েল পাখি ডিমের আকৃতি ছোট তাই এর পুষ্টি গুনাগুন কম। মোটেও তাই নাই কোয়েল পাখির ডিমের ছোট হলেও এর অসম্ভব পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমানে ডিমের বাজারে নতুন মাত্রায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে কোয়েল পাখির ডিম। অন্যান্য ডিমের তুলনায় কোয়েল পাখির ডিম সস্তা। কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা অনেক যা অন্যান্য ডিমে পাওয়া যায় না। কোয়েল পাখির ডিম শিশু, গর্ভবতী মা ও সকল বয়সের মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে।

কোয়েল পাখির ডিমে কত ক্যালরি

আমরা অনেকেই জানতে চাই কোয়েল পাখির ডিমের বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়াও জানতে চাই কোয়েল পাখির ডিমে কত ক্যালরি রয়েছে। কোয়েল পাখির ডিমে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কোয়েল পাখির ডিমে প্রতি ১০০ গ্রামে ১৫৮ ক্যালরি আছে। এছাড়াও প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল আছে।

কোয়েল পাখির ডিমের অপকারিতা

কোয়েল পাখি ডিমে যেমন বিভিন্ন রকমের উপকারিতা রয়েছে। আবার পুষ্টিগুণেও অতুলনীয়। তেমনই কোয়েল পাখির ডিমের কিছু অপকারিত রয়েছে। অতিরিক্ত মাত্রায় কোয়েল পাখির ডিম খেলে। কোয়েল পাখির ডিমের প্রতি ১০০ গ্রামে কোলেস্টেরল থাকে ৮৪৪ গ্রাম। যা মুরগি হাঁস বা অন্যান্য ডিমের তুলনায় অনেক বেশি। আমাদের যাদের কোলেস্টরলের সমস্যা রয়েছে তাদের উচিত কোয়েল পাখির ডিম অতিরিক্ত পরিমাণে না খাওয়া।

কোলেস্টেরলের পাশাপাশি রয়েছে ফ্যাট। ফ্যাট যা ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের সমস্যার কারণ হয়। আপনাদের যাদের উচ্চমাধ্যায় ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের কোয়েল পাখির ডিম এড়িয়ে চলা উত্তম। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কোয়েল পাখির ডিম গ্রহণ করা উচিত।

কোয়েল পাখির মাংসের উপকারিতা

  • অন্যান্য পাখি বা মুরগির তুলনায় কোয়েল পাখির দাম কম হয় নির্ণয়ের মানুষ এটি কিনে খেতে পারে।
  • যে সকল রোগীরা হৃদরোগে আক্রান্ত তাদের জন্য কোয়েল পাখির মাংস উপকারি কারণ কোয়েল পাখির মাংসে ফ্যাট কম থাকে।
  • কোয়েল পাখির মাংস নরম হয় যা সহজেই খেতে পারা যায় ও দ্রুত হজমে সাহায্য করে।
  • কোয়েল পাখির মাংসের বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন রয়েছে যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • কোয়েল পাখির মাংস আমাদের শারীরিক দুর্বলতা দূর করে।
  • বাচ্চাদের শারীরিক-মানসিক ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটাতে কোয়েল পাখির ডিম ভূমিকা রাখে। এছাড়াও শিশুদের বিভিন্ন ধরনের রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
  • যে সকল রোগীদের ডায়াবেটিকস আছে তাদের জন্য কোয়েল পাখির মাংস খুবই উপযোগী।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আজকের এই আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আজকের আর্টিকেলটির মধ্যে কোয়েল পাখি ডিমের উপকারিতা পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টি গুণাগুন সম্পর্কে ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো কোয়েল পাখির ডিম গ্রহণে শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সহ পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে।

আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি বিন্দুমাত্র উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিন। আশা করি আজকের এই পোস্টটি আপনি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। আপনার যদি কোন মতামত এবং প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদেরকে জানাতে পারেন। আর হ্যাঁ ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে ভুলবেন না। আপনার প্রতিটা মুহূর্ত সুন্দর হোক-আসসালামু আলাইকুম

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url