গরুর ক্ষুরা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

গরুর ক্ষুরা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে না জানা থাকে তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকে আমরা এই আর্টিকেলটির মধ্যে আপনাকে জানাবো আপনি গবাদিপশু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হলে কিভাবে ঘরোয়া চিকিৎসা করবেন।

গবাদি পশুর বিভিন্ন রোগের বিভিন্ন লক্ষণ ও প্রতিকার ব্যবস্থা রয়েছে যা আমরা অনেকেই জানিনা। তাই এই আর্টিকেলটির মধ্যে গরুর ক্ষুরা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আর্টিকে লটি ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন।

ভূমিকা

এটি গরুর একটি ভাইরাসজনিত সাধারণ রোগ। সাধারণত বাতাসের মাধ্যমে এ ভাইরাসের জীবাণু এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত খামার বা গরুর সংস্পর্শে আসা কোন ব্যক্তির মাধ্যমেও এটি সহজে ছড়াতে পারে। গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগের লক্ষণ জানা থাকলে খুব দ্রুত প্রতিকার ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করতে পারব। 

ক্ষুরা রোগের প্রধান যে সকল লক্ষণ রয়েছে তার মধ্যে লালা ঝরা একটি অন্যতম লক্ষণ। গবাদি পশুর মুখ দিয়ে অতিরিক্ত লালা ঝরলে আমরা সাথে সাথে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব। অনেক সময় গবাদি পশু এ রোগে আক্রান্ত হলে খাদ্যের অনিহা দেখায়। গবাদি পশু উঠে দাঁড়াতে পারে না কারণ পায়ের ক্ষুরায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়। 

লক্ষ্য রাখতে হবে ক্ষতস্থান গুলোতে যেন কোন প্রকার মশা মাছি না পড়ে। বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে গরু পালন করে ব্যাপক লাভবান হওয়া যাচ্ছে। আর একটি পূর্ণাঙ্গ খামার গড়ে তুলতে হলে রোগ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। আমার এই আর্টিকেলটির মধ্যে ক্ষুরা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি । বিস্তারিত জানার জন্য আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন।

গরুর ক্ষুরা রোগের লক্ষণ

  • আক্রান্ত গরুর পায়ের খুরায় এবং মুখে ঘা হয়। যার ফলে ক্ষতস্থানে সৃষ্টি হয়।
  • গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগের লক্ষণ হিসেবে মুখে ঘা হওয়ায় গরু সহজে খাবার খেতে পারে না। পশুর এই রোগ সাধারণত দাঁতের মাড়ি, জিহ্বায়, নাকের ছিদ্রে ফোসকা পড়ে। এই সকল ফোসকার ব্যথার কারণে গরুর খাবার খেতে সমস্যা হয় যার ফলে গবাদি পশু খাবার গ্রহণে অনিহা প্রকাশ করে।
  • ক্ষুরা রোগের আরেকটি লক্ষণ হলো গবাদিপশুর মুখ থেকে অতিরিক্ত লালা ঝরা। ক্ষুরা রোগের কারণে গবাদি পশুর মুখের ভেতরে ফোস্কা বা ক্ষতের সৃষ্টি হয় যা থেকে অনবরত লালা নিঃসরণ করে
  • ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হলে গরুর স্বাভাবিক তাপমাত্রা থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে গবাদি পশুর শরীরে জ্বর আসতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ১০৪-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়।
  • ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত গবাদিপশুর দুধ উৎপাদন কমে যায়। আক্রান্ত অবস্থায় গাভী খাওয়া-দাওয়া কমে যায়।
  • ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হলে গবাদি পশুর মাংস উৎপাদন কমে যায় এবং আক্রান্ত অবস্থায় পশুর ওজন হ্রাস পায়।
  • হৃদপিণ্ড আক্রান্ত হয় বলে এ রোগে আক্রান্ত বাছুরকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।

ক্ষুরা রোগের প্রতিকার

আমরা অনেকেই জানিনা গরুর ক্ষুরা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে। না জানার কারণে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
  • গবাদি পশুর থাকার স্থান সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবনে মুক্ত রাখতে হবে।
  • খামারের বিভিন্ন কাজে যারা নিয়োজিত থাকবে তাদের ব্যতীত অন্য কোন লোকদের খামারের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে।
  • খামারের মধ্যে মশা মাছি যাতে প্রবেশ না করে তা নিশ্চিত করতে হবে।
  • নতুন গবাদি পশু ক্রয়ের পর ওয়ারেন্টিনে রেখে খামারে প্রবেশ করতে হবে।
  • প্রতি ৪ মাস পরপর গরুর বাছুরকে ক্ষুরারোগের টিকা দিতে হবে।
  • আক্রান্ত প্রাণিকে অন্যান্য প্রাণি থেকে আলাদা করতে হবে।
  • নরম ও তরল খাবার সরবরাহ করতে হবে।
  • আক্রান্ত প্রাণিকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক (ভেটেরিনারিয়ান) দ্বারা অতি দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে।

গরুর ক্ষুরা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

গবাদি প্রচুর বহুল পরিচিত একটি রোগ ক্ষুরা রোগ। আমরা ইতিমধ্যে ক্ষরা রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জেনেছি। এই রোগকে সাধারণত মানুষ ক্যান্সারের সাথে তুলনা করে। এই রোগ হলে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে গরুকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়। গবাদি পশুর বিভিন্ন রোগ হলে আমরা ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিছু চিকিৎসা প্রয়োগ করে থাকি। ঘরোয়া পদ্ধতির পাশাপাশি সাথে সাথে বিশেষজ্ঞ পশু চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

নিম্নে ক্ষুরা রোগের ঘরোয়া পদ্ধতিতে সম্পর্কে কিছু টিপস তুলে ধরা হলোঃ

  • একদল গবাদি পশুর মধ্যে যদি কোন একটি পশু আক্রান্ত হয় তাহলে প্রথম কাজ হচ্ছে সেই পশুকে অন্য পশু থেকে পৃথক করে করে রাখা। যাতে করে এই পশুর থেকে রোগ অন্য পশুর মধ্যে ছড়িয়ে যেতে না পারে। রোগ আক্রান্ত পশুকে আলাদা করে সরিয়ে নিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রাখার বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে।
  • রোগে আক্রান্ত পশুর জন্য আরামদায় জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে পশুর মানসিক চাপ কমতে থাকে।
  • রোগ আক্রান্ত পশুকে যেখানে রাখা হবে ওই আবাসস্থল সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
  • বিশেষ নজর রাখতে হবে পশুর যেখানে ক্ষতস্থানে সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষতস্থানের ওপরে কোনভাবেই মশা মাছি বসতে দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে মোশারির ব্যবস্থা করতে হবে।
  • আক্রান্ত গরুর ক্ষুরা রোগের লক্ষণ অনুসারে একজন বিশেষজ্ঞ পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ক্ষতস্থানের উপর মেডিসিন বা স্প্রে করতে হবে।
  • রোগ আক্রান্ত পশুর কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত লোক যেন না যায় এ ব্যাপারে কড়াঁ নজরদারি রাখতে হবে।
  • আক্রান্ত পশুর সেবার কাজে যে সকল লোক নিয়োজিত থাকবে তাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও নিজেকে সর্বদা জীবাণুমুক্ত রাখা প্রয়োজন।
  • রোগাক্রান্ত অবস্থায় সবসময়ের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। রোগ আক্রান্ত গবাদি পশুর রোগাক্রান্ত অবস্থায় বিশুদ্ধ পানি সহ সুষুম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। যাতে করে পশুর দেহের শক্তির যোগান দিতে পারে। এছাড়াও রোগাক্রান্ত অবস্থায় গরুর খাদ্যের উপাদানের ওপর বিশেষ নজর রাখতে হবে।

গরুর ক্ষুরা রোগ কেন হয়?

আমরা অনেকে হয়তো জানি না ক্ষুরা রোগ গবাদি পশুর কেন হয়ে থাকে। আমাদের সবার লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা প্রয়োজন যাতে করে আমরা গবাদি পশুর প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করতে পারি।
  • রোগাক্রান্ত পশুকে কোনভাবেই সুস্থ পশুদের সাথে রাখা যাবে না কারণ রোগাক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে আসলে অন্যান্য পশুরাও আক্রান্ত হয়
  • কোন অবস্থাতেই আক্রান্ত পশুর খাবার ও ব্যবহৃত সরঞ্জাম সুস্থ পশুর জন্য ব্যবহার করা যাবে না এর ফলে ভাইরাস সংক্রমনের মাধ্যমে অন্য পশুর ক্ষুরা রোগ হয়ে থাকে
  • গবাদি পশুকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য টিকা দেয়া হয়ে থাকে। নিয়মিত টিকা দেওয়া না হলে ক্ষুরা রোগ হতে পারে।
  • স্যাঁতস্যাঁতে ও অতিরিক্ত আদ্রতা জনিত জায়গায় পশুকে রাখলে ভাইরাসের আক্রমণ হতে পারে যার ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়।
  • আমরা বিভিন্ন সময় পশু ক্রয় বিক্রয় করে থাকি। এই ক্রয় বিক্রয়ের সময় যানবাহনে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সকল যানবাহনে কোন রোগ আক্রান্ত পশু আছে কিনা সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। এর ফলে ক্ষুরা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
  • গবাদি পশুর খামার সবসময়ের জন্য র্জীবাণুমুক্ত না রাখলে ক্ষুরা রোগের আক্রমণ হতে পারে।
  • নতুন কোন গরু বাজার থেকে আনার পরে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে খামারে তুলতে হবে যাতে করে রোগাক্রান্ত আছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমার এই আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। বর্তমানে গরুর পালন বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পেশা। গরু পালন করে বাংলাদেশের বেকারত্ব দূর করা যায়। একটি খামার স্থাপনের জন্য গবাদি পশুর রোগ বিস্তার সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী। এর ফলে গবাদিপশুকে দেখলে যেন আমরা সঙ্গে সঙ্গে চিহ্নিত করে চিকিৎসা প্রদান করতে পারি। 

প্রতিটি রোগের ক্ষেত্রেই রোগের লক্ষণ দেখা মাত্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নেব। এতে করে আমরা বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পারব। আশা করি এই আর্টিকেলটি থেকে আপনারা উপকৃত হবেন। পরবর্তীতে যদি কোন বিষয়ে জানতে চান তাহলে আমাকে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।

আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি এবং আপনার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের সাথে আমাদের এই ওয়েবসাইট সম্পর্কে শেয়ার করবেন। নিয়মিত ভিজিট করার জন্য উৎসাহ করবেন। আপনার প্রতিটা মুহূর্ত সুন্দর হোক-আসসালামু আলাইকুম

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url