নিম গাছের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
নিম গাছের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। নিম গাছের বহু ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। যা আমাদের অনেকের অজানা। আজকে আর্টিকেলটির মাধ্যমে নিম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম জানতে পারবেন। নিম গাছের সকল উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন।
আর্টিকেলটি মধ্যে নিম গাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে করবেন তা জানতে পারবেন। আরও রয়েছে আমরা নিম গাছের কোন কোন অংশ ব্যবহার করতে পারব। সবকিছু একসঙ্গে বিস্তারিত জানতে আমার এই আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
নিম গাছ আমাদের একটি পরিচিত গাছ। এই নিম গাছের বহু উপকারিতা রয়েছে আরও রয়েছে বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুন। নিম গাছের সম্পূর্ণ অংশ ঔষধি গুনাগুনের ভরপুর। আমরা অনেকেই নিম গাছের উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে সঠিক জানিনা। চুলে নিম পাতা ব্যবহারে বিভিন্ন ধরনের উপকার পাওয়া যায়।
যার মধ্যে রয়েছে চুলের বৃদ্ধি, চুলের খুশকি দূর করতে, ও উকুন দমনে নিম পাতা ব্যাপক কাজ করে। নিম পাতা খেলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় যেমন এইডস, আলসার, ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ থেকে উপসম পাওয়া যায়। আমরা ঘরোয়া পদ্ধতিতে নিম পাতা দ্বারা বিভিন্ন ধরনের উপকরণ তৈরি করতে পারি। যা এই আর্টিকেলটির মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
নিম গাছের বৈশিষ্ট্য
নিম বাংলাদেশে বহু প্রচলিত একটি বৃক্ষ। নিম গাছকে বিভিন্ন অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন নামে ডাকা হয় যেমন নিম্ব, ভেপা, তামার আরো বিভিন্ন নামে। নিম গাছ আমাদের উপকারী বন্ধু হিসেবে পরিচিত। আদিম কাল থেকে নিম গাছের জনপ্রিয়তা মানুষের কাছে বহু গুণ। নিম গাছ খুব সহজে বৃদ্ধি পায়। নিম সাধারণত চির হরিৎ বৃক্ষ ও বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। নিম গাছ ২০-২৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
শুকনো জায়গায় এই গাছ লাগালে পত্রঝরা বৃক্ষের মতো সকল পাতা একটি মৌসুমে ঝরে যায়। এই গাছের গোড়া অনেক মোটা হয় যা ৭০ থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। নিম গাছের নিচের দিকের অংশ অমসৃণ ও খসখসে ছালযুক্ত হয়। গাছের উপরের অংশের কচি ডালগুলো রং সাধারণত খয়েরি ও মসৃণ হয়। ডালের চারিদিকে ১০-১৭ টি খাঁচকাটা পত্রক থাকে।
এই পত্রক গুলো ৬ থেকে ৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। নিম গাছের পাতা সারা বছর জন্মায়। কিন্তু বসন্তের সময় বেশিরভাগ পাতা গাছ থেকে ঝরে পড়ে। নিম গাছ খরা সহ্য করতে পারে। নিম ফল পাখিদের একটি প্রিয় খাবার। মৌসুমে যখন নিম ফল পাকলে তখন বিভিন্ন ধরনের পাখি নিমগাছে ফল সংগ্রহের জন্য আসে। নিমের অনেক ঔষধি গুনাগুন রয়েছে।
নিম গাছকে পৃথিবীর মধ্যে দামি বা শ্রেষ্ঠ বৃক্ষ হিসাবে ধরা হয়। যার কারনে নিম গাছের বিভিন্ন রকম উপকারিতা রয়েছে। সাথে রয়েছে নিম পাতার বিভিন্ন ওষুধি গুনাগুন। নিম গাছ বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকাতেই দেখা যায় কিন্তু বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে নিম গাছের পরিমাণ বেশি পাওয়া যায়।
আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে- কেন আমরা নিম গাছ লাগাবো? নিম গাছ আমাদের দেশীয় একটি গাছ। নিম গাছ পরিবেশকে রক্ষা করে, দারিদ্র বিমোচনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, নিম থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক প্রসাধনী উৎপাদন হয়, এছাড়াও বিভিন্ন রকম ওষুধ, জৈব সার তৈরি, আমাদের রূপচর্চার কাজে, নিম গাছের কাঠ আসবাবপত্র ব্যবহারে, ছায়া প্রদানে বিশেষভাবে কাজ করে।
এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিমগাছ আমাদেরকে রক্ষা করে। নিম গাছ তাপমাত্রা শোষণ করতে পারে তাই নিম গাছের নিচে অন্যান্য গাছের তুলনায় এক থেকে দুই ডিগ্রি তাপমাত্রা কম থাকে।
নিম গাছের উপকারিতা
ম্যালেরিয়াতেঃ নিম পাতা ব্যবহার ম্যালেরিয়ার জন্য উপকারী। ম্যালেরিয়া ভালো করতে নিম পাতা নির্যাস ব্যবহার করা হয়।
এইডস রোগ দমনেঃ নিম পাতার রস গ্রহণ করলে এইডস রোগ থেকে বাঁচা যায়। এইডস রোগের ভাইরাস মারতে নিম গাছের বাকল থেঁতো করে রস গ্রহণ করতে হবে।
আলসার দামনেঃ যে সকল রোগীদের আলসার রয়েছে সে সকল রোগীরা যদি নিম পাতার রস গ্রহণ করে তাহলে পেপটিক ও ডিওডেনাল আলসার ভালো হয়।
জন্ডিস রোগ নিরাময়ঃ নিম পাতার রস গ্রহণে জন্ডিস রোগ ভালো হয়। মধুর সাথে ৩০ ফোঁটা নিমপাতার রস মিশিয়ে যদি আমরা সকালবেলা খালি পেটে খেতে পারি তাহলে জন্ডিস রোগ ভালো হয়।
চোখের ব্যথাঃ চোখের ব্যথা দূর করানের জন্য শুষ্ক আদা, লবণ ও নিমপাতা একত্রে গুঁড়ো করে হালকা গরম করে নিতে হবে। ততপর একটি পরিষ্কার কাপড়ের সাথে লাগিয়ে চোখ ঢেকে দিলে চোখের ব্যথা দূর হয়।
ক্যান্সার নিরাময়ঃ ক্যান্সার নিরাময় নিম পাতার গুরুত্ব অতুলনীয়। নিম পাতার রস, বাকল এছাড়াও নিমের তেল ক্যান্সার নিরাময়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দাঁতের যত্নেঃ নিমের ডাল দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলে দাঁত ও দাঁতের মাঁড়ির ভালো থাকে। এছাড়াও নিম পাতার রস দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিলে দাঁতের মাঁড়ি ব্যথা, মাঁড়ি থেকে রক্তপাত ভালো হয়।
বমি নিরাময়ঃ আমাদের অনেকের বমি করার অভ্যাস রয়েছে। এই বমি নিরাময়ে নিম পাতার রস খুবই কাজ করে। বমি আসার উপক্রম হলে পাঁচ থেকে ছয় ফোটা নিম পাতা রসের সাথে দুধ মিশিয়ে খেলে বমি ভালো হয়।
আসবাবপত্র তৈরিতেঃ নিম গাছ থেকে ভালো মানের কাঠ পাওয়া যায়। যা থেকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহারের জন্য আসবাবপত্র তৈরি করা হয়। বিশেষ করে নিম কাঠের আসবাবপত্র ব্যবহারে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। নিন কাঠ দিয়ে খাট, আলমারি, সুকেশ, ড্রেসিং টেবিল, ডাইনিং টেবিলসহ বিভিন্ন প্রকার আসবাবপত্র তৈরি করা হয়।
ত্বকের যত্নেঃ আমরা সবাই ত্বক ভালো রাখার চেষ্টা করি। ত্বকের যত্নে নিমের উপকারিতা অনেক। নিয়মিত নিমপাতা পেস্ট ব্যবহার করলে ত্বকে ব্রণ কমায়।
খুশকি দূর করতেঃ শীতকালে আমাদের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় চুলের খুশকি। আরে খুশকি নিরাময়ে নিম পাতার রস কাজ করে।
ওজন কমাতেঃ বর্তমানে আমাদের ওজন নিয়ে বেশি ভাবাই। ওজন কমাতে চাইলে নিয়মিত নিম ফুলের জুস সেবন করতে পারেন। দেহের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে আমাদের শরীরের চর্বি ভেঙ্গে ফেলতে সাহায্য করে এই নিম ফুল। প্রথমে এক মুঠো নিমফুল ভালোভাবে ভেঙ্গে নিতে হবে, এর সাথে চা চামচে এক চা চামচ মধু ও সামান্য পরিমাণ লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে যদি পান করতে পারেন তাহলে ওজন কমাতে এটি ব্যাপক কাজ করবে।
ছত্রাক দমনেঃ ছত্রাক দমনে নিম গাছের উপকারিতা অতুলনীয়। আপনি জেনে অবাক হবেন যে নেমে নিম্বিডল এবং জেডুনিন রয়েছে যা ফাঙ্গাস দমন করতে পারে। নিম পাতার পেস্ট ভালোভাবে তৈরি করে ক্ষত বা আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দিলে ভালো ফলাফল পাবেন।
কাপড় রক্ষার্থেঃ আমরা সাধারণত আমাদের কাপড় চোপড় আলমারিতে সংরক্ষণ করে থাকি কিন্তু বেশিরভাগ সময় দেখা যায় বর্ষাকালে কাপড় চোপড়ে বাজে গন্ধ তৈরি হয়। কাপড়চোপড় গন্ধের কারণে বিভিন্ন পোকার উপদ্রব হয় যা আমাদের কাপড় কে কেটে নষ্ট করে ফেলে। এই সমস্যা দূর করার জন্য আমরা আলমারির এক জায়গায় শুকনো নিমপাতা ঝুলিয়ে রাখতে পারলে এই থেকে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।
মশা নিরাময়ঃ অতিরিক্ত মশার প্রকল্প হলে শুকনো নিমের ছাল ও পাতা পুড়িয়ে ধোঁয়া দিলে মশা তাড়ানো সম্ভব হয়।
নিম গাছের ছালের উপকারিতা
আমাদের বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে পোকামাকড় কামড়ায়। যা থেকে প্রচুর ব্যথা সৃষ্টি হয়। এই ব্যথা নিরাময়ে নিম গাছের ছাল উপকারী ভূমিকা পালন করে। ব্যথার স্থানে নিম গাছের ছাল বেটে লাগিয়ে দিলে সাথে সাথে ব্যথা উপশম হয়। কৃমি দূর করতে নিম গাছের ছাল কাজ করে। অজীর্ণ রোগ হলে মুখে পানি আসে এই সময় নিম গাছের ছাল চার থেকে পাঁচ গ্রাম নিয়ে এক কাপ গরম পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা খালি পেটে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
নিম গাছের রাসায়নিক উপাদান
নিম গাছের সম্পূর্ণ অংশে যেমন ছাল, ফুল, ফল, বীজে ও তেলে বিভিন্ন ধরনের উপাদান রয়েছে। এই উপাদান গুলো হলোঃ নিম্বোলাইড, স্যাপোনিন, নিম্বন, এজমডারিন, নিম্বিনিন, নিম্বডল, ট্রাইটারপেনয়েড ও সালনিন। এছাড়াও নিমগাছে আরো রয়েছে এজাডিরাকটিন, জৈব এসিড, মেলিয়ানোন, এলকালয়েড নিমবিডিন, কুয়ারসেটিন ও গ্লাইকোসাইড, ট্যানিন, মারগোসিনসহ বিভিন্ন উপাদান। যা আমাদের বিভিন্ন রকম কাজে ব্যবহার হয়।
নিম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম
প্রতিটি প্রাণী, উদ্ভিদ কুল সহ সবার স্থানীয় নামের পাশাপাশি একটি বৈজ্ঞানিক নাম আছে। যেটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। এই বৈজ্ঞানিক নাম দ্বারা বিশ্ববাজারে পরিচয় পাওয়া যায়। তেমনি নিম গাছের একটি বৈজ্ঞানিক নাম রয়েছে যা আমাদের অনেকের অজানা। নিম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হলো-
স্থানীয় নামঃ নিম
বৈজ্ঞানিক নামঃ Azadirachta indica
নিম গাছের ব্যবহৃত অংশ
নিম গাছ এমন একটা উদ্ভিদ যা সম্পূর্ণ অংশই ব্যবহার করা যায়। নিম গাছের সম্পূর্ণ অংশই কোন না কোন কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। বিশেষ করে ফুল, পাতা, ছাল, ফল বা বীজ ও তেল ব্যবহার হয়।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আজকের এই আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আজকের আর্টিকেলটির মধ্যে নিম পাতার উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। চুলের যত্নে নিম পাতার ভূমিকা সম্পর্কে ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো নিম পাতার বিভিন্ন ওষুধি গুণ রয়েছে যা আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি লাভ করব। এছাড়াও প্রাকৃতিক উপায়ে নিমপাতা ব্যবহারে ত্বক, চুলের যত্ন, দাঁতের যত্ন সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে।
আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি বিন্দুমাত্র উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও নিম পাতার বিভিন্ন ধরণের উপকারিতা ও ব্যবহারের গুনাগুন সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিন। আশা করি আজকের এই পোস্টটি আপনি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। আপনার যদি কোন মতামত এবং প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদেরকে জানাতে পারেন। আর হ্যাঁ ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে ভুলবেন না। আপনার প্রতিটা মুহূর্ত সুন্দর হোক-আসসালামু আলাইকুম
এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url