ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা অনেকেই খোঁজাখুঁজি করি। আজকের আর্টিকেলটি ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি নিয়ে। আর্টিকেলটির মধ্যে আপনি জানতে পারবেন তবে কিভাবে টপে ক্যাপসিকাম চাষ করবেন। বাংলাদেশে ক্যাপসিকাম একটি অত্যন্ত সুস্বাদু সবজি।
ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি
ক্যাপসিকাম উপযুক্ত সময় চাষ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। সকল কিছু একসঙ্গে জানতে আজকের এই আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ুন।

ভূমিকা

ক্যাপসিকাম বা মিষ্টির মরিচ সারা পৃথিবীর মধ্যে একটি জনপ্রিয় সবজি। ক্যাপসিকাম এর চাহিদা বাংলাদেশে দিন দিন বৃদ্ধি পেতে আছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের ক্যাপসিকাম পাওয়া যায়। ক্যাপসিকাম বিভিন্ন ধরনের পাশাপাশি বিভিন্ন আকার ও আকৃতির হয়ে থাকে। পূর্বে বাংলাদেশ এর চাহিদা না থাকলেও দিন দিন এ চাষাবাদ প্রসারিত হচ্ছে। 

ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ চাষ করতে খুব কম পুঁজির প্রয়োজন হয়। এছাড়াও ক্যাপসিকাম টপে চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। আপনি যদি ক্যাপসিকাম এর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে চাষাবাদ করতে পারেন তাহলে আশা করি ভালো ফলন পাবেন।

ক্যাপসিকাম চাষের সময়

ক্যাপসিকাম চাষ করতে হলে প্রথমে জানতে হবে ক্যাপসিকাম চাষের সময় কখন। আমরা অনেকেই জানিনা ক্যাপসিকাম কোন সময় রোপন করতে হয়। বাংলাদেশে ক্যাপসিকাম এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের সাধারণত ক্যাপসিকাম চাষের সঠিক সময় হলো অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস। এছাড়াও বর্তমানে ১২ মাস চাষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

ক্যাপসিকাম চাষের উপযুক্ত তাপমাত্রা হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও আবহাওয়া শুষ্ক হলে সবচাইতে বেশি উপযোগী। ক্যাপসিকাম এর রাতের তাপমাত্রা ১৭ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকতে হয় এর কম হলে গাছ বৃদ্ধি হয় না।

ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি

ক্যাপসিয়াম চাষ পদ্ধতিতে চাষের জন্য দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি উপযোগী। ক্যাপসিকাম গাছে অধিক পরিমাণে খরা ও গাছের গোড়ায় পানি জমা হয়ে থাকলে ক্যাপসিকাম সেটি সহ্য করতে পারে না। ক্যাপসিকাম চাষের সঠিক সময় হচ্ছে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে। এক গ্রাম বীজের জন্য এক শতক জমি প্রয়োজন হয়। 


ক্যাপসিকাম চাষ করতে হলে প্রথমে বীজ অন্য জায়গায় রোপন করে চারা তৈরি করে নিতে হবে। চারা তৈরির পূর্বে বীজ গুলোকে একটি পাত্রে ১১ থেকে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। যেখানে ক্যাপসিকামের চারা রোপন করা হবে সেই বীজতলা আগে থেকে তৈরি করে নিতে হবে। বীজতলায় একটি ক্যাপসিকামের চারা থেকে অন্যটি ক্যাপসিকামে চারা দূরত্ব ১০ সেন্টিমিটার হতে হবে। 

বীজ রোপণের ৮ থেকে ১০ দিন পর চারার তিন থেকে চারটি পাতা হলে পলিথিন ব্যাগে সরিয়ে নিতে হবে। ক্যাপসিকাম চাষের মূল জমিতে রোপনের পূর্বে জমিকে ভালোভাবে চাষ করতে হবে। চাষকৃত জমি মই দিয়ে মাটি গুলোকে ঝুরঝুরে করতে হবে। যাতে বেড তৈরি করতে সুবিধা হয়। বেড তৈরি এমনভাবে করতে হবে যেন প্রতিটি বেদের চওড়া ২.৫ ফুটের মধ্যে হয়। 

অবশ্যই দুইটি বেডের মাঝামাঝি নালা রাখতে হবে। যাতে করে পানি সরবরাহ ভালোভাবে করা যায়। জমি তৈরির সময় শতক প্রতি গোবর সার ৪০ কেজি, ইউরিয়া সার ১ কেজি, টিএসপি সার ১.৪ কেজি, এমওপি সার ১ কেজি, দস্তা ২০ গ্রাম এবং জিপসাম ৪৫০ গ্রাম অনুপাত হারে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। 

এর মধ্যে অর্ধেক গোবর সার জমি তৈরির সময়, বাকি অর্ধেক গোবর সার সম্পূর্ণ টিএসপি সার, দস্তা, জিপসাম, ১/৩ ভাগ এমওপি এবং ১/৩ ভাগ ইউরিয়া সার যে গর্তে চারা রোপন করবে ওই গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ২/৩ ভাগ ইউরিয়া সার এবং এমওপি সার পরবর্তীতে দুইভাগ করে চারা রোপণের ২৭ এবং ৫০ দিন পর চারার গোড়ায় প্রয়োগ দিতে হবে। শীতকালে রাতের তাপমাত্রা অনেক কমে যায় আর ক্যাপসিকাম উপরে পলিথিন দিয়ে সাওনি দিয়ে দিতে হবে যাতে তাপমাত্রা বেশি থাকে। 


ক্যাপসিকাম অতিরিক্ত খরা ও জলবদ্ধতা কোনটাই সহ্য করতে পারে না তাই সঠিক সময়ে জমিতে সেচ দিতে হবে। ক্যাপসিকামের গাছ ছোট অবস্থায় ফল ধরে এবং ফলের ওজন অনেক বেশি হয় তাই ফল ধরার পূর্বে গাছে খুঁটি দিতে হবে যাতে ফল হেলে না পড়ে। এছাড়া জমিতে কোন প্রকার আগাছা হতে দেয়া যাবে না। জমির আগাছা সবসময় পরিষ্কার করতে হবে। আগাছা যুক্ত জমির ফলন ভালো হয় না। আগাছা মুক্ত জমিতে ফলন ভালো আসে।

টবে ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি

ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতির মধ্যে টবে চাষ পদ্ধতি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। টপে চাষ পদ্ধতিতে বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। এছাড়াও টপে ক্যাপসিকাম বাড়ির আঙ্গিনা, ছাদ ও ব্যালকনি ইত্যাদি জায়গায় টপ রেখে চাষ করা যায়। টপে ক্যাপসিকাম চাষ করতে হলে টপ ভালোভাবে নির্বাচন করতে হবে। সবসময় জন্য মাঝারি আকারের টপ নিতে হবে। 

টবে নিচে অবশ্যই ছিদ্র থাকতে হবে যাতে অতিরিক্ত পানি দিলে নিষ্কাশন করা যায়। ক্যাপসিকাম চাষের জন্য বেলে দোআঁশ বা দোআঁশ মাটি প্রয়োজন। মাটিতে ক্যাপসিকাম ভালো ফলন পাওয়া যায়। টবে লাগানোর পূর্বে মাটিগুলোকে ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। মাটির সাথে অর্ধেক গোবর সার, অল্প পরিমাণ ইউরিয়া, সামান্য পরিমাণ পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম একত্রে মিশিয়ে নিতে হবে।


সবকিছু একত্রে মিশিয়ে টপ মাটি দ্বারা পূর্ণ করতে হবে। টপে রোপন এর চারা ৩০ থেকে ৪০ দিনের হতে হবে। টপে চারা রোপণের সময় কোনভাবেই সূর্যের তাপে রোপন করা যাবে না উত্তম সময় হিসেবে চারা বিকেলে রোপণ করতে হবে।

ক্যাপসিকাম গাছের যত্ন

ক্যাপসিকাম গাছের যত্ন নিতে হলে সর্বপ্রথম খেয়াল রাখতে হবে যাতে গাছের গোড়ায় কোন। ধরনের আগাছা না জন্মে। আগাছা জন্মালে ফলন ভালো পাওয়া যায় না। তাই আগাছা সবসময় নিড়ানি দিয়ে নীড়াতে হবে। ক্যাপসিকাম গাছের গোড়ার নিচে খরা বা জলবদ্ধতা কোনটাই রাখা যাবে না। নিয়ম অনুসারে গাছের গোড়াতে পানি দিতে হবে। 


টপে বা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করলে গাছের চারার ফল ধরার আগে খুঁটি দিতে হবে যাতে করে গাছ হেলে না পড়ে। ক্যাপসিকামের গাছ বিভিন্ন সময় পোকামাকড় ছত্রাক ও ভাইরাসজনিত রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আক্রান্ত হলে খুব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গাছে ভাইরাস আক্রমণ করলে পাতা সাধারণত কুঁকড়ে যায়। এসব রোগ হলে গাছ খুব তাড়াতাড়ি ধ্বংস হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে।

ক্যাপসিকামের পুষ্টিমান

খাদ্য তালিকায় সবজি হিসাবে ক্যাপসিকাম ব্যবহার করা হয়। ক্যাপসিকামে অন্যান্য সবজি ন্যায় পুষ্টিগুণে ভরপুর। ক্যাপসিকাম সাধারণত একপ্রকার মিষ্টি মরিচ। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।

ক্যাপসিকাম তোলার সময়

ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতির পাশাপাশি ফল সংগ্রহের সঠিক সময় সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।ক্যাপসিকাম সাধারণত পরিপক্ক সবুজ হলে অথবা লালচে হওয়ার আগেই গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিটি গাছ থেকে সপ্তাহে অন্তত একবার ফল সংগ্রহ করা যেতে পারে। বাজারজাতকরণের জন্য ফল সংগ্রহের পর ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। ফল সংগ্রহের সময় প্রতিটি ফলের সাথে ছোট্ট বোটা রাখতে হবে।

লেখক এর মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি নিশ্চয়ই এতক্ষণে বিস্তারিত ভাবে জেনে গেছেন কিভাবে আপনি ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ চাষ করবেন। ক্যাপসিকামে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান যা আমাদের দেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। তাই ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখা প্রয়োজন। 

আর্টিকেলটির মধ্যে আপনি কিভাবে টপে ক্যাপসিকাম চাষ করবেন তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। মূল কথা হচ্ছে আপনি যদি ভালোমতো নিয়ম জেনে ক্যাপসিকাম চাষ করতে পারেন তাহলে অবশ্যই ভালো ফলন পাবেন। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনার কাছে অনেক ভালো লেগেছে এবং এই আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। 

তাই এই আর্টিকেলটি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। কেননা আপনার মাধ্যমে আপনার বন্ধুরাও ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানবে এবং চাষ করতে আগ্রহ হবে। আর অবশ্যই আমাদের এই ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট বা ফোলো করার চেষ্টা করবেন। কারণ আমরা এই ওয়েবসাইটে নিয়মিত নতুন নতুন ব্লগ পোস্ট বা আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url