আদা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

আদা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অনেকের অজানা। আজকের এই আর্টিকেলটি আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আপনি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে জানতে পারবেন কাঁচা আদা খাওয়ার নিয়ম।
আদা খাওয়ার উপকারিতা
আর্টিকেলটির মধ্যে আরও জানতে পারবেন আদা ও মধু খাওয়ার নিয়ম এবং এই থেকে কি কি উপকার পাবেন। সকল কিছু জানতে এই আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ুন।

ভূমিকা

আদা আমাদের একটি পরিচিত নাম। আমরা সকলেই আদা চিনি। কিন্তু হয়তো অনেকেই আদার গুনাগুন সম্পর্কে সঠিকভাবে আজও জানিনা। নিয়মিত আদা সেবন করে আপনার আমাশয়, পেটফাঁপা, পেটব্যথা দূর করতে পারেন। সকাল বেলা খালি পেটে আদা সেবন করতে পারেন তাহলে আপনার দেহের গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। 

আদা খাওয়ার উপকারিতার মধ্যে একটি বিশেষ গুণ রয়েছে সেটি হলো কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ। আদা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

আদার খাওয়ার উপকারিতা

আদার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি হয়তো সঠিকভাবে জানার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। আজকে এই আর্টিকেলের মধ্যে আদা খাওয়ার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। আজ আমরা সাধারণত মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। এছাড়াও আদা আমাদের বিভিন্ন ধরনের কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে।

আমাশয়, পেটফাঁপা, পেটব্যথা দূর করতেঃ আপনি যদি আমাশয়, পেটফাঁপা, পেটব্যথা ভুগেন তাহলে আপনার জন্য আদা অত্যন্ত দারুন কাজ করবে। আপনি এক চা চামচ আদার রস নিয়ে নিন সাথে এক কাপ গরম পানি একত্রে মিশিয়ে খাওয়ার পর সেবন করলে আমাশয়, পেটফাঁপা, পেটব্যথা দূর হবে। আপনি যদি এই সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগেন তাহলে এক কাপ গরম পানি নিন, এক চা চামচ আদার রস ও লেবুর রস সাথে মধু সবকিছু একত্রে মিশিয়ে চায়ের মতো তৈরি করুন এটি রাতে যদি আপনি নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে সুফল পাবেন।


হাঁপানি ও ফুসফুসে সংক্রমণ রোধেঃ আদার উপকারিতার মধ্যে হাঁপানি ও ফুসফুসে সংক্রমণ রোধ এটি একটি। আপনার যদি শ্বাস নিতে কষ্ট হয় বা হাঁপানি থাকে তাহলে প্রতিদিন নিয়মিত মধু এক কাপ, লেবুর রস ও এক চামচ আদার রস একত্রে এক কাপ গরম পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে সেবন করতে পারেন। এইভাবে যদি আপনি ১৫ দিন খেতে পারেন তাহলে ভালো সুফল পাবেন।

হৃদরোগেঃ প্রাকৃতিক উপায়ে হূদরোগ নিরাময় করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। যারা হৃদরোগ সমস্যায় ভুগছেন অথচ উচ্চ রক্তচাপ নেই তাদের জন্য নিয়মিত দিনে দুইবার লেবুর রসরে সাথে এক চা–চামচ আদার রস ও মধু গরম পানি এক কাপ নিয়ে মিশিয়ে চায়ের মতো করে খাবেন।

গ্যাসের সমস্যা দূর করতেঃ আপনি প্রাকৃতিকভাবে গ্যাস জনিত সমস্যা দূর করতে পারেন। গরম পানির সাথে এক চা–চামচ আদার রস ভালোভাবে মিশিয়ে চায়ের মতো তৈরি করে ৫-৬ বার সেবন করলে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়।


জ্বর জ্বর ভাব দূর করতেঃ অনেক সময় আমাদের শরীরে জ্বর জ্বর ভাব দেখা যায় মনে হয় শরীরের ভেতরে জ্বর আছে। আপনি চাইলে প্রাকৃতিক উপায়ে এটি ভালো করতে পারেন। প্রথমে গরম পানির সাথে এক চামচ আদার রস ভালোভাবে মিশিয়ে চায়ের মত তৈরি করুন এবং ৫-৬ বার সেবন করুন। এই থেকে আপনার শরীরে জ্বর জ্বর ভাব ও বমি বমি ভাব দূর হবে।

মাইগ্রেন সমস্যায়ঃ আপনি চাইলে তৎক্ষণিক মাইগ্রেনের সমস্যা প্রাকৃতিক উপায়ে দূর করতে পারেন। আপনার মাইগ্রেন শুরু হলে কাঁচা আদার সাথে সামান্য লবণ নিয়ে ভালোমতো চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন দেখবেন সাথে সাথে মাইগ্রেন থেকে উপশম পাবেন। এছাড়াও আপনি চাইলে মাইগ্রেনের ব্যথাকে একেবারে ভালো করতে পারেন। এর জন্য প্রতিদিন ২ বার এক চামচ আদার রসের সাথে অল্প পরিমাণে লেবুর রস ও মধু এক কাপ গরম পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে চায়ের মতো সেবন করুন এই থেকে আপনার মাইগ্রেনের সমস্যা দূর হবে।

খাদ্যের রুচি বাড়াতেঃ নিয়মিত আদা সেবন করলে খাদ্যের রুচি আসে, ক্ষুধার ভাব বাড়াবে ও দ্রুত হজমে সাহায্য করে।

কাশি ও কফ ভালো করতেঃ আপনি যদি কাশি জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে প্রতিদিন ২ বার এক চামচ আদার রসের সাথে অল্প পরিমাণে লেবুর রস ও মধু এক কাপ গরম পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে চায়ের মতো সেবন করুন দেখবেন কাশি ও কফ দূর হবে।

পাকস্থলী ও লিভারের শক্তি বৃদ্ধিতেঃ আপনি চাইলে প্রতিদিন একই পরিমাণ আদার গুঁড়া সাথে মধু এবং আমলকীর গুঁড়া একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে রেখে নিয়মিত দিনে ৩ বার চায়ের মতো করে খাওয়া যেতে পারে। প্রতিদিন ২ বার এক চামচ আদার রসের সাথে অল্প পরিমাণে লেবুর রস ও মধু এক কাপ গরম পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে চায়ের মতো সেবন করুন দেখবেন পাকস্থলী ও লিভারের শক্তি বৃদ্ধি পাবে।


উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ আপনাদের যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা প্রতিদিন ২ বার এক চামচ আদার রসের সাথে অল্প পরিমাণে লেবুর রস ও মধু এক কাপ গরম পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে চায়ের মতো সেবন করতে পারেন। এতে করে আপনার দেহের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। আপনি যদি ডায়াবেটিস এর রোগী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই মধু ব্যতীত খেতে হবে।

ক্যান্সার রোধেঃ নিয়মিত আদা সেবনে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। ক্যান্সার তৈরি হয় এমন কোষগুলো আদায় থাকা বিভিন্ন উপাদান দ্বারা ধ্বংস হয় ফলে দেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।

খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা

আদার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ অনেক। আদা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ উপাদান। আপনি যদি নিয়মিত আদা সেবন করতে পারেন তাহলে বিভিন্ন প্রকার রোগ থেকে খুব সহজে দূরে থাকতে পারবেন। আসুন জেনে নিন পানির সাথে খালি পেটে আদা খাওয়ার বিভিন্ন প্রকার উপকারিতা।

বমি বমি ভাব দূর করতেঃ আদাতে থাকা কিছু প্রাকৃতিক উপাদান আপনার দেহের বমি বমি ভাব দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি বমি বমি ভাব জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে নিয়মিত পানির সাথে সকাল বেলা খালি পেটে আদা খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন। এর ফলে আপনি দ্রুত উপকার পাবেন।

প্রদাহ সারাতেঃ মানুষের দেহের ভেতরে অনবরত বিপাকক্রিয়া চলে। এর ফলে আমাদের দেহে কিছু ক্ষতিকর পদার্থ তৈরি হয়ে থাকে। সে সকল পদার্থ দেহের ভিতরে প্রদাহ তৈরি করতে পারে। আপনার দেহে প্রদাহ জনিত সমস্যা সারাতে সাহায্য করবে আদা ও পানি। আপনি যদি নিয়মিত খালি পেটে আদা ও পানি পান করতে পারেন তাহলে দেহের প্রদাহ কমে আসবে।

কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেঃ আমাদের সবারই কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখা খুবই জরুরী। রক্তে থাকা মোম জাতীয় পদার্থের নাম হল কোলেস্টেরল। দেহের ভিতরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে এটি রক্তনালীর মধ্যে জমে যায়। যার ফলে মানুষের দেহের যে রক্তের প্রবাহ স্বাভাবিকভাবে হয় সেটি হতে পারে না। ফলে হার্টের অসুখ, পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ, স্ট্রোকসহ আরও অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।  তাই কোলেস্টেরলকে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে আদা ও পানি। আপনি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে নিয়মিত আদা ও পানি খেতে পারেন।


গ্যাস ও অ্যাসিডিটিতেঃ আমরা অনেক সময় গ্যাস, অ্যাসিডিটির সমস্যাই ভুগে থাকি থাকে। এক্ষেত্রে আমরা গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট খেয়ে থাকি। তবে আপনি যদি ওষুধ নিয়মিত খেয়ে খাকেন তাহলে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে আপনার লিভার, কিডনির মতো অঙ্গে। তাই আপনি চাইলে প্রাকৃতিকভাবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান করতে পারেন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আদা পানি খেলে গ্যাস ও অ্যাসিডিটির মত সমস্যা দ্রুত কমে আসবে।

আদার ঔষধি গুন

আপনি যেন আশ্চর্য হবেন যে আদার উপরে উল্লেখিত উপকারিতা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুনাগুন রয়েছে। যা আমাদের দেহকে ভালো রাখতে সব সময়ের জন্য সাহায্য করে।
আদা সেবনে জ্বর, ঠাণ্ডা লাগা, ব্যথা থেকে অনেক উপকারী পাওয়া যায়।
  • নিয়মিত আদা সেবনে আপনার দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতেও আদা সাহায্য করবে।
  • বসন্ত রোগ হলে আদার রস খবুই উপকারী।
  • আমাদের দেহকে শীতল রাখে আদার রস।
  • এছাড়াও আদা হৃৎপিণ্ডের জন্য অত্যান্ত উপকারী।
  • আপনি যদি কাশি এবং হাঁপানির হাসতে ভোগেন তাহলে আদার রসের সাথে মধু মিশিয়ে সেবন করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

আদার বৈজ্ঞানিক নাম কি

স্থানীয় নামের পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক নাম প্রত্যেকটি প্রাণী ও উদ্ভিদকুল সবার রয়েছে। তেমনি আদার একটি বৈজ্ঞানিক নাম রয়েছে যা আমাদের অনেকের অজানা। আদার বৈজ্ঞানিক নাম হলো-

স্থানীয় নামঃ আদা

বৈজ্ঞানিক নামঃ Zingiber officinale

কাঁচা আদা খাওয়ার নিয়ম

আদা খাওয়া নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। আমরা সাধারণত আদা মসলা হিসেবে তরকারিতে খেয়ে থাকি। এছাড়াও আপনি চাইলে কাঁচা আদাও খেতে পারেন। আমরা তার সাথে আদা কুচি করে মিশিয়ে খেয়ে থাকি। এভাবে আদা খেলে মাথা ব্যথা থেকে উপশম পাওয়া যায়। আপনি সকাল বেলা খালি পেটে পানির সাথে আদা সেবন করতে পারেন। আপনি যদি মনে করেন মধু সাথে আদা খাবেন সেটিও খেতে পারবেন।

আদা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

আদা ও মধু খাওয়ার বিভিন্ন ধরনের নিয়ম রয়েছে। আপনার শ্বাস নিতে কষ্ট হয় বা হাঁপানি থাকে তাহলে প্রতিদিন নিয়মিত মধু এক কাপ, লেবুর রস ও এক চামচ আদার রস একত্রে এক কাপ গরম পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে সেবন করতে পারেন। হৃদরোগে নিয়মিত দিনে দুইবার লেবুর রসরে সাথে এক চা–চামচ আদার রস ও মধু গরম পানি এক কাপ নিয়ে মিশিয়ে চায়ের মতো করে খেতে পারেন।

কাশি ও কফ ভালো করতে চাইলে প্রতিদিন ২ বার এক চামচ আদার রসের সাথে অল্প পরিমাণে লেবুর রস ও মধু এক কাপ গরম পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে চায়ের মতো সেবন করুন দেখবেন কাশি ও কফ দূর হবে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিদিন ২ বার এক চামচ আদার রসের সাথে অল্প পরিমাণে লেবুর রস ও মধু এক কাপ গরম পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে চায়ের মতো সেবন করতে পারেন।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক এতক্ষণ পর্যন্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আর্টিক্যালটির মধ্যে আপনি আদা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এছাড়াও আদা কোন কোন সময় খেলে আপনি বেশি উপকৃত হবেন এই সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। শেষ কথা হচ্ছে আদা মসলার পাশাপাশি বিভিন্ন ঔষধি গুণাগুণে ভরপুর। 

তাই আমরা চেষ্টা করব নিয়মিত আদা খাওয়ার কিন্তু এর আগে আদা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেব। যাতে অতিরিক্ত আদা খাওয়ার ফলে আমাদের দেহের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না পড়ে।আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি এবং আপনার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের সাথে আমাদের এই ওয়েবসাইট সম্পর্কে শেয়ার করবেন। নিয়মিত ভিজিট করার জন্য উৎসাহ করবেন। আপনার প্রতিটা মুহূর্ত সুন্দর হোক-আসসালামু আলাইকুম

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url