গরুর খাদ্যের উপাদান ও কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

 আপনি কি গরুর খাদ্যের উপাদান ও কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? আপনি কি গরুর খাদ্যের উপাদান ও কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকে আমরা এই আর্টিকেলটির মধ্যে আপনাকে জানাবো কিভাবে গরুর খাদ্যের উপাদান ও কার্যকারিতা রক্ষা করা যায়।


গরুর খাদ্যের উপাদান ও কার্যকারিতা সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। আমরা এই আর্টিকেলটির মধ্যে গরুর খাদ্যের উপাদান ও কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন।

ভূমিকা

আর্টিকালটির মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনা কিভাবে করতে হয়। সেইসাথে গাভী গরুর দানাদার খাদ্য প্রস্তুত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনারা অনেকেই জানতে চান কিভাবে গাভী গরুর দানাদার খাদ্য তৈরি করব। সেই বিষয়টি এই আর্টিক্যাল এর মধ্যে তুলে ধরেছি। আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি আরো জানতে পারবেন গরুর সুষম খাদ্য কিভাবে প্রস্তুত করতে হয়।

সুষম খাদ্য গবাদি পশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গবাদি পশুর খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন। গবাদি পশুকে কাঁচা ঘাস খাওয়ালে বিভিন্ন উপকারিতা পাওয়া যায়। বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য আমার এই আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন।

গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনা

সঠিকভাবে গরু পালনের সাথে সাথে জানতে হবে গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে। গরুর জাত, শারীরিক গঠন, উপাদান ও ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে খাদ্যের ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে যে ধরনের প্রাণী হোক না কেন খাদ্যের ছয়টি উপাদান যেমন- শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, মিনারেল ও পানি থাকতে হবে। খাদ্য উপাদানে কোন একটি অভাব থাকলে গরুর সমস্যা দেখা যায়।

কোন ক্ষেত্রে উপাদান হ্রাস পায় এবং কোন ক্ষেত্রে বিভিন্ন অপুষ্ট জনিত রোগের সূচনা হয় তাই দুগ্ধ খামারের খাদ্য ব্যবস্থাপনা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই সকল খাদ্য উপাদানের ওপর ভিত্তি করে গবাদি প্রাণীর খাদ্য বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।

গাভীর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় সাধারণ নিয়মাবলী

  • গাভীর খাদ্য অবশ্যই সুষম হতে হবে অর্থাৎ খাদ্যপ্রয়োজনে পুষ্টি উপাদান সমূহ সঠিক মাত্রায় থাকতে হবে।
  • খাদ্য অবশ্যই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভজনক হতে হবে। অর্থাৎ সহজ প্রাপ্য এবং দাম কম এরূপ উপকরণ দিয়ে খাদ্য প্রস্তুত করতে হবে।
  • দুগ্ধবতী গাভীর দুধে শতকরা প্রায় ৮৭ ভাগ পানি থাকে। তাই দুগ্ধবতী গাভীর ক্ষেত্রে সুপেয় পানি সরবরাহর ব্যবস্থা রাখতে হবে। একটি গাভীকে প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০ লিটার পানি প্রদান করতে হবে।
  • দুগ্ধবতী গাভীর জন্য বিভিন্ন ধরনের উপকরণ ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি করতে হবে যাতে খাদ্য পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও সহজ পাচ্য এবং দামেও কম হয়।
  • গরুকে খাবার প্রদানের সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে খাদ্য দ্বারা পেট ভরে এবং পুষ্টির অভাব পূরণ হয়। কারণ গরুর পরিপাকতন্ত্র অনেক বড় থাকে যার ফলে গরুর প্রচুর পরিমাণে খাদ্যের প্রয়োজন হয়। আমরা গরুর চাহিদা মত খাবার সরবরাহ করব যদি চাহিদা মতো খাবার সরবরাহ না করা হয় তাহলে বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা খেয়ে ফেলতে পারে এতে গরুর বদহজম ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • গাভীর খাদ্য ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় রাখা যাবে না কারণ ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় খাবার রাখলে সেখানে ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে। তাই গাভীর খাদ্যদ্রব্য সবসময় পরিষ্কার হতে হবে। ময়লা, পঁচা, কাঁকড়, পাথর, বালি, মাটি ও দুর্গন্ধযুক্ত খাবার কখনোই গাভীকে খেতে দেওয়া উচিত নয় কারণ এই থেকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
  • গ্রামাঞ্চলে সাধারণত গরুর খাদ্য হিসেবে কাঁচা ঘাস ব্যবহার করা হয়। কারণ গাভীর জন্য কাঁচা ঘাস অতি গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচা ঘাসে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান ও ভিটামিন থাকে। গাভীকে দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে।
  • গাভীর অন্যান্য খাদ্যের পাশাপাশি দানাদার খাদ্য দিতে হবে। অবশ্যেই দানাদার খাদ্য সঠিকভাবে প্রস্তুত করে গাভীকে দিতে হবে। দানাদার খাদ্য উপাদানগুলো তৈরি করার পূর্বে ভালোভাবে ভেঙে নিতে হবে যাতে খাবার ভালোভাবে মিশে যায় এবং সহজে হজম হয়।
  • খাদ্যের অপচয় কমাতে আঁশ ছোবড়া জাতীয় খাদ্য যেমন- খড়, কাঁচা ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি আস্ত না দিয়ে ছোট ছোট আকারে কেটে দিতে হবে এতে খাদ্যের অপচয় কম হবে। গাভী এ সকল খাদ্য সহজেই খেতে পারবে এবং হজমেও সহায়ক হবে।
  • খাদ্য ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গরুর খাদ্য উপকরণ হঠাৎ করে পরিবর্তন না আনা। যদি কোন খাদ্যের পরিবর্তন আনতে হয় তাহলে ধীরে ধীরে দিনে দিনে করতে হবে। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় গরুকে নিয়মিত খাবার সরবরাহ করতে হবে। গরুর চাহিদা মত খাবার সরবরাহ করা উত্তম।

গাভী গরুর দানাদার খাদ্য তালিকা

গরু পালনের ক্ষেত্রে অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি দানাদার খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা আছে। দৈনিক খাদ্য তালিকায় দানাদার খাদ্য রাখতে হবে। দানাদার খাদ্য তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হল-গমের ভুষি, খৈল, খেসারি ভাঙ্গা, মাশকলাই ভাঙ্গা, চাউলের গুঁড়া, খাদ্য লবণ, ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স।

ইউ. এম. এস তৈরিঃ গাভী বাছুর এবং সার মোটাতাজাকরণসহ যেকোন গরুর জন্য একটি স্বাভাবিক শুকনো আঁশ জাতীয় খাবার খড় যা সস্তা, সহজলভ্য ও সচরাচর পাওয়া যায়। কিন্তু খালি শুকনা খড় গরুকে খাওয়ালে খড়ের মাত্রা শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ কাজে লাগে। কিন্তু যদি প্রক্রিয়া করে ইউ. এম. এস তৈরি করে খাওয়াতে পারলে প্রায় বেশিরভাগ অংশই কাজে লাগে এবং অপচয় কম হয়।

ইউ. এম. এস তৈরি পদ্ধতিঃ
  • প্রয়োজন অনুযায়ী খড় ওজন করে নিন;
  • খড়ের অর্ধেক পানি (লিটার) মেপে নিন;
  • পানির অর্ধেক চিটাগুড় মেপে আলাদা পাত্রে নিন;
  • খড়ের ওজনের শতকরা ৩ ভাগ ইউরিয়া সার ওজন করে একটি পাত্রে রাখুন;
  • খড় একটি পলিথিনের উপর সমানভাবে বিছিয়ে দিন;
  • এবার চিটাগুর পানির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন;
  • ইউরিয়া সার (খড়ের শতকরা তিন ভাগ) মিশ্রিত দ্রবণের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন যাতে কোন সারের দানা অদ্রবনীয় না থাকে;
  • এবার মিশ্রিত দ্রবণ খড়ের ওপরে ভালোভাবে ছিটিয়ে দিন খড়গুলো ওলট পালট করে পুনরায় দ্রবণ ছিটিয়ে দিন যাতে দ্রবণটি খড়ের সকল স্থানে সমভাবে মিশে;
  • এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলেই ইউ.এম.এস তৈরির কাজ সম্পন্ন হলো;
  • তৈরিকৃত ইউ.এম.এস সকল ধরনের গরুকে পরিমাণ মতো খেতে দিন, তবে একবার তৈরি করা ইউ.এম.এস তিনদিনের বেশি রাখা যাবে না;

গরুর খাদ্যের উপাদান ও কার্যকারিতা

সকল প্রকার খাদ্য উপকরণেই বিভিন্ন খাদ্য পুষ্টি বা উপাদান বিদ্যামান। এ সকল খাদ্য পুষ্টি যেমন- আমিষ, শর্করা, চর্বি, খনিজ এবং ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ শরীরে বিভিন্ন কার্যাবলী সাধন করে থাকে এবং এর মধ্যে যে কোন একটি অভাব বা ঘাটতি হলে শরীর রক্ষায়, রোগ প্রতিরোধে, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।

আমিষের উৎস ও তার কাজঃ বিভিন্ন প্রকার শস্য দানা ও শস্য উপজাত যেমন ডাল, ডালের ভুষি, গমের ভুসি ইত্যাদি খাদ্য উপাদান আমিষের প্রধান উৎস। আমিষের কাজ- নতুন জীবকোষ গঠন করা, ক্ষয়প্রাপ্ত দেহকোষ পূর্ণ গঠন করে, পশুর উৎপাদন বৃদ্ধি করে।

শর্করার উৎস ও তার কাজঃ খড় কুড়া, ভুষি এ জাতীয় খাদ্য উপকরণ শর্করা সমৃদ্ধ। এ সকল খাদ্য প্রাণীর শরীরে শর্করার অভাব পূরণ করে। শর্করা উপাদান সমূহ শরীরের তাপ সৃষ্টি করে, কাজ করার শক্তি যোগায়, পশুকে কর্মক্ষম রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

খনিজের উৎস তার কাজঃ বিভিন্ন ধরনের খনিজ শরীরের জন্য অত্যাবশক। নানা প্রকার খাদ্য উপকরণসমূহে যে পরিমাণ খনিজ উপাদান বিদ্যামান তা গরুর জন্য যথেষ্ট নয়। এজন্য গরুর খাদ্য কিছু অতিরিক্ত খনিজ খাদ্য প্রয়োজন। খনিজ জাতীয় খাদ্য উপকরণ যেমন- লবণ, হাড়ের গুড়া ইত্যাদি সরবরাহ করা প্রয়োজন। খনিজ উপাদানের কাজ গুলো হলো- হাড়ের গঠন করা, হাড়ের ক্ষয়রোধ করে, মাংস উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করা, রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে এবং রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ ইত্যাদি করতে সাহায্য করে।

ভিটামিন ও তার কাজঃ ভিটামিন অজৈব রাসায়নিক পদার্থ এবং শরীরের জন্য অপরিহার্য। সবুজ ঘাস, লতাপাতায় প্রচুর ভিটামিন বিদ্যমান। এছাড়াও কিছু কিছু ভিটামিন গবাদি পশুর পাকস্থলীতে তৈরি হয়। ভিটামিন পশুর গ্রহণকৃত খাদ্যকে কাজে লাগিয়ে- বিপাকীয় কার্যক্রমে সহায়তা করে, খাদ্য পরিপাকে ভূমিকা রাখে, শারীরিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, উৎপাদন বৃদ্ধি করে, প্রজননে ভূমিকা রাখে, স্নায়বিক দুর্বলতা রোধ করে, এনজাইম তৈরিতে সহায়তা করে, সর্বোপরি রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই গরুর খাদ্য তালিকায় ভিটামিন জাতীয় খাবার রাখতে হবে।

পানি ও তার কাজঃ আমরা সবাই জানি পানির অপর নাম জীবন। হোক সেটা গবাদি পশু বা মানুষ সব ক্ষেত্রেই সমান। তবে আমাদের গরুকে সরবরাহকৃত পানি অবশ্যই বিশুদ্ধ হতে হবে। সাধারণত খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর-ডোবার পানি জীবাণুযুক্ত হতে পারে। তাই আমরা অবশ্যই গরুকে টিউবওয়েলের পানি সরবরাহ করব যাতে পানি বাহিত রোগ দ্বারা আক্রান্ত না হয়। গবাদি পশুর দেহে পানি পানির কাজ- খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে, দেহের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে খাদ্য পুষ্টি পৌঁছে দেয়, শরীরের দূষিত পদার্থ অপসারণ করে, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ও দেহের বিভিন্ন গ্রন্থী সমূহের রস তৈরি করে।

গরুর সুষম খাদ্য তালিকা

গবাদি পশুর খাদ্য তালিকায় সুষম খাদ্য রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেহের প্রয়োজন অনুসারে স্বাস্থ্য রক্ষা, উৎপাদন বৃদ্ধিতে গরুর জন্য সকল প্রকার খাদ্য পুষ্টি বিদ্যমান থাকতে হবে। যে সকল খাদ্য গুরু আগ্রহ সহকারে গ্রহণ করেনা এরূপ খাদ্য উপকরণ পরিহার করে তার পছন্দনীয় খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।গরুর খাবার তালিকায় ভেজাল খাদ্য বা ধুলাবালি যুক্ত খাদ্য রাখা যাবে না।

ভেজাল খাদ্যদ্রব্য গরুর উৎপাদন হ্রাস করে, দেহে বিরূপ প্রক্রিয়া সৃষ্টি করে, এমনকি পশুর মৃত্যুও ঘটাতে পারে। শস্যদানা হিসেবে গম ডাউল ইত্যাদি ভেঙে গুড়া করে দিতে হবে। আস্ত শস্য দানা অনেক ক্ষেত্রে পশু হজম করতে পারেনা। তাই শস্য দানা যেমন-ডাল, গম, ভুট্টা ইত্যাদি আধাভাঙ্গা অবস্থায় পশুকে সরবরাহ করতে হবে। দানাদার জাতীয় খাদ্য অবশ্যই গরুকে পরিমাণ মতো দিতে হবে ।

গরুকে কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর উপকারিতা

আঁশ জাতীয় খাদ্য গরুর জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচা ঘাস ও খড় আঁশ জাতীয় খাদ্যের প্রধান উৎস। গবাদি পশুর শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে এবং গাভীর উৎপাদন বৃদ্ধিতে ঘাসের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। গরুর পাকস্থলীর জন্য ঘাস জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন খড় আঁশ জাতীয় খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল হলেও ইদানিং প্রয়োজনীয় খড় পাওয়া যাচ্ছে না পাওয়া গেলেও অনেক বেশি দাম দিয়ে খড় কিনতে হয়।

আগে গরু বাছুরের জন্য পর্যাপ্ত চারণভূমি ছিল বলে সহজে ঘাস পাওয়া যেত। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বর্ধিত জনসংখ্যার বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, হাটবাজার, স্কুল কলেজ ইত্যাদি তৈরিতে চারণভূমি ব্যবহার হচ্ছে বা পতিত জমি ব্যবহার হচ্ছে। ফলে গবাদি প্রাণীর কাঁচা ঘাস প্রাপ্তির উৎস এখন আর নেই বললেই চলে। বর্তমানে চারনভূমির অভাবে গাভীকে ঘরে রেখে পালন করা হয়।

এতে করে পর্যাপ্ত ঘাসের অভাবে গাভীর উৎপাদন কমে যায়। অধিক পরিমাণ দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর হয় ফলে খরচ বেড়ে যায়। তাই অল্প জমিতে বেশি উৎপাদন পেতে উন্নত জাতের ঘাস চাষের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যে সকল উন্নত জাতের ঘাস দেশে পাওয়া যায় সেগুলো হল- নেপিয়ার ঘাস, পারা ঘাস, জার্মান ঘাস ও জাম্পু ঘাস ইত্যাদি।

তাছাড়া গরুর খাদ্য হিসেবে বর্তমানে ভুট্টা, মাসকলাই, খেসারি ইত্যাদি ঘাস চাষের ব্যাপক চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে দেশের কিছু কিছু অঞ্চলে নেপিয়ার, পারা, জার্মান ও জাম্পু ঘাস চাষ করে মানুষ আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে এবং অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। গরুকে কাঁচা ঘাস খাওয়ালে বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায় যা নিম্নরূপঃ
  • দুধ উৎপাদনকারী গাভী হতে অধিক দুধ পাওয়া যায়;
  • কাঁচা ঘাস খাওয়ালে দানাদার খাবার কম লাগে বলে খাদ্য খরচ কম হয়;
  • কাঁচা ঘাস খাওয়ালে গাভীর শরীরে ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব কম দেখা দেয়;
  • যে গাভী নিয়মিত কাঁচা ঘাস খায় সেটি সুস্থ সবল বাছুর জন্ম দেয়;
  • একেবারেই কৃত্রিম প্রজননের সফলতা পাওয়া যায়;
  • জন্মের সময় বাছুরের মৃত্যুহার খুবই কম হয়;
  • কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে যে বাছুর জন্ম নেয় তার দৈহিক ওজন কাঙ্খিত মাত্রায় পাওয়া যায়;
  • রোগ ব্যাধি কম হয় ফলে চিকিৎসা খরচ খুবই কম হয়;
  • গাভীর মৃত্যুহার খুবই কম হয় ফলে আর্থিক ক্ষতি হয় না;
  • দুধ উৎপাদন বেশি হলে গরীব কৃষক দুধ বিক্রয়ের পাশাপাশি নিজেরাও দুধ খেয়ে সুস্থ থাকে;
  • বাচ্চা প্রসবের সমস্যা কম হয়;
  • এক একর জমিতে ধান চাষ এর থেকে ঘাস চাষ করলে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লাভ পাওয়া যায়;
  • অনেকে আবার ঘাস বিক্রি করে উপার্জনের পথ বের করে;
  • লাভ বেশি হয় বলে কৃষক গাভী পালনে উৎসাহিত হয়;

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমার এই আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। বর্তমানে গরুর পালন বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পেশা। গবাদিপশুর খাবার প্রস্তুত করার জন্য বিভিন্ন বিষয় জানা প্রয়োজন। নিয়ম অনুসারে গবাদি পশুর খাদ্য ব্যবস্থাপনা করলে ভালো ফলাফল পাবেন। আশা করি এই আর্টিকেলটি থেকে আপনারা উপকৃত হবেন। পরবর্তীতে যদি কোন বিষয়ে জানতে চান তাহলে আমাকে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।

আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি এবং আপনার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের সাথে আমাদের এই ওয়েবসাইট সম্পর্কে শেয়ার করবেন। নিয়মিত ভিজিট করার জন্য উৎসাহ করবেন। আপনার প্রতিটা মুহূর্ত সুন্দর হোক-আসসালামু আলাইকুম

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url