গরুর মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতা কি বিস্তারিত জানুন

 আপনি কি গরুর মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকে আমরা এই আর্টিকেলটির মধ্যে আপনাকে জানাবো গরুর মাংস খাওয়ার যে সকল উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে।


প্রতিটি মানুষেরই গরুর মাংস খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। আমরা এই আর্টিকেলটির মধ্যে গরুর মাংস খাওয়ার যে সকল উপকার এবং অপকার রয়েছে তা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সকল কিছু জানতে আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন।

ভূমিকা

মাংসের মধ্যে একটি লোভনীয় মাংস গরুর মাংস। যা আমাদের ম্যাক্সিমাম মানুষের পছন্দের তালিকায় প্রথম। গরুর মাংসের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমাদের দেহের বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের যোগান দেয়। পাশাপাশি গরুর মাংসের অপকারিতা ও রয়েছে। আমরা অনেকেই জানিনা গরুর মাংসে এলার্জি আছে কিনা। যে সকল রোগীদের অ্যালার্জি আছে তাদের গরুর মাংস ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া না খাওয়া উত্তম। গরুর মাংসের বিভিন্ন ধরনের উপকার ও অপকার সম্পর্কে জানার জন্য আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ

বাংলাদেশের মানুষের খাবার তালিকায় একটি পছন্দনীয় খাবার গরুর মাংস। গরুর মাংস খেতে স্বাদ ও পুষ্টি উপাদানে অতুলনীয়। গরুর মাংসের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে। বাংলাদেশ একটি ইসলাম ধর্মাবলীর দেশ। বাংলাদেশের মানুষ যে পশু সবথেকে বেশি কুরবানী দেয় সেটি হল গরু। গরুর মাংস খেলে বিভিন্ন ধরনের প্রকার উপকার পাওয়া যায় যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গরুর মাংসে কি কি ভিটামিন আছে

প্রোটিনঃ গরুর মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে যা আমাদের শরীরের হাড়, মাংসপেশি কে শক্তিশালী ও মজবুত করে গড়ে তোলে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শের মতে ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ২২.৬ গ্রাম প্রোটিন পেয়ে থাকি। মাংসের চর্বির পরিমাণ কম থাকলে প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
ফ্যাটঃ গরুর মাংসের আরেকটি উপাদান হলো ফ্যাট। স্বাস্থ্যবান গরুতে চর্বির পরিমাণ অধিক থাকে। চর্বি দ্বারা মাংসের স্বাদ বৃদ্ধি পায়।

ভিটামিনঃ গরুর মাংসে ভিটামিনের পরিমাণ বেশি থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাংসে ভিটামিন বি এর উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা যায়। যেমন ভিটামিন বি১২, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি২, এবং ভিটামিন বি৫। উল্লেখ্য যে ভিটামিন বি১২ ত্বককে প্রাণবন্ত করে, আমাদের মেজাজকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সাহায্য করে, ঘুম ভালো করে এবং স্নায়ু কোষ পূর্ণ গঠন করতে সাহায্য করে। ফসফরাস, প্রোটিন, জিংক ও সেলেনিয়াম সামান্য পরিমাণে গরুর মাংসে রয়েছে যা আমাদের মানব দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মিনারেলঃ শরীরে বিভিন্ন ধরনের মিনারেলের প্রয়োজন হয়ে থাকে। এই মিনারেলের সেরা উৎস হল গরুর মাংস। গরুর মাংস থেকেই আমাদের শরীরের মিনারেলের চাহিদা পূরণ হয়। গরুর মাংসের মিনারেল এক উপকারিতা হলো- আমাদের দেহের রোগ দমন তন্ত্র কে অধিক শক্তিশালী করে, হাড় ও দাঁত কে মজবুত করে গড়ে তোলে, তাপমাত্রা কে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, যাদের মাথা ব্যথা রয়েছে সে সকল রোগীদের মাথাব্যথায় প্রতিরোধ করে।

আয়রনঃ গরুর মাংসের তুলনামূলক আয়রন রয়েছে। যা মানুষের দেহের রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। আয়রন রক্তের ভেতরে অক্সিজেন সরবরাহ করে।

গরুর মাংসে কি এলার্জি আছে

বাংলাদেশের প্রধান দুটি উৎসব হচ্ছে ঈদ। যার মধ্যে একটি কুরবানী ঈদ। কুরবানী ঈদ মানে খাবার তালিকায় গরুর মাংস। ঈদের পরবর্তী দিনগুলো গরুর মাংসের বিভিন্ন রান্নার আয়োজন হয়। এই সকল রান্না করা খাবার এড়িয়ে চলা খুব মুশকিল। তাই প্রচুর পরিমাণে গরুর মাংস আমরা খেয়ে ফেলি আর এই থেকে আমাদের শরীরে এলার্জির দেখা দেয়।

বর্তমানে ছোট বড় সকলেই খাবার এলার্জির সাথে পরিচিত। মানুষের বিভিন্ন ধরনের মাংস থেকে এলার্জি হয়ে থাকে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস, ছাগলের মাংস, হাঁসের মাংস, মুরগির মাংস এবং অন্যান্য শাক সবজির থেকে। রান্না করা মাংসের এলার্জি সম্ভাবনা কম থাকে। গরুর মাংস খাওয়ার পর এ্যালার্জিনের সংস্পর্শে ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং দেহের কোষ থেকে হিস্টামিন নিঃসরণ হয়ে রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয় যার জন্য দেহের মধ্যে এলার্জি সৃষ্টি হয়।

গরুর মাংসের এলার্জির লক্ষণগুলো

  • গরুর মাংস খাওয়ার পর শরীরের বিভিন্ন অংশে ফুসকুড়ি বের হয়। যেমন মুখ, জিব্বা, গলা, হাত-পা ইত্যাদি। এছাড়াও ফুসকুড়ি বের হওয়ার পর অত্যাধিক চুলকানির সৃষ্টি হয়। যা শরীরকে লাল লাল দাগে পরিণত করে।
  • যাদের গরুর মাংস এলার্জি আছে তাদের গরুর মাংস খাওয়ার পর পরে চোখ ফুলে যায়। চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরে। চোখে সামান্য পরিমাণ ঝাপসা দেখে। চোখ প্রচুর পরিমাণে চুলকায়।
  • মানুষের এলার্জি তে একই রকম উপসর্গ দেখা দেয় না কোন কোন মানুষের পেট ব্যথা বমি বমি ভাব ও ডায়রিয়া হয়। যা এলার্জির উপশম হিসেবে পরিলক্ষিত।
  • যাদের সাধারণত মাইগ্রেনের সমস্যা আছে। তাদের অত্যাধিক গরুর মাংস খেলে মাইগ্রেন বেড়ে যায়। লক্ষণ হিসেবে মানুষের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় ।
  • গরুর মাংস থেকে হাঁচি, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে পানি ছরা এই ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়।
  • গরুর মাংসের এলার্জির লক্ষণ হিসেবে মানুষের নিঃশ্বাসের দুর্বলতা ও শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে।

গরুর মাংসের উপকারিতা

  • গরুর মাংস শিশুর বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে শিশুর বুদ্ধিবৃত্তির গঠন বাড়ায়, শারীরিক বর্ধন করে ও রক্তবর্ধনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • মানবদেহে খনিজের অভাব দূর করে। আমাদের শরীরে খনিজের অভাবে যেসব রোগ সৃষ্টি হয় গরুর মাংস দ্বারা সে সকল রোগ দূর করে। মানবদেহের খনিজ লবণের প্রয়োজন আছে যা সাধারণত গরুর মাংস থেকে পাওয়া যায়। এই মাংসে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন আছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভিটামিন বি-৩, বি-৬, বি-১২ ইত্যাদি।
  • মানবদেহের জিংক একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। জিংক এর অভাবে অনেক ধরনের রোগ হয়ে থাকে প্রধানত কিশোর কিশোরীরা। তাই জিংকের অভাব পূরণের জন্য গরুর মাংসের কোন বিকল্প নেই।
  • গরুর মাংসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ফসফরাস থাকে যা আমাদের শরীরের হাড় ও দাঁত কে মজবুত করে।
  • গরুর মাংসের প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। মাংস ছাড়াও কলিজা, মগজ, হাড়ের মধ্যে ইত্যাদি থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন মেলে। এই প্রোটিন থেকে দেহে অ্যামাইনো অ্যাসিড পাওয়া যায় যা হাড় ও মাংস পেশিকে সবল রাখতে সাহায্য করে।

গরুর মাংসের অপকারিতা

  • গরুর মাংসের যেমন উপকারী দিক আছে তেমনি বিশেষ কিছু ক্ষতিকর দিক আছে। যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিশেষ করে যে সকল মানুষ অতিরিক্ত পরিমাণে গরুর মাংস গ্রহণ করেন।
  • গরুর মাংসের অধিক পরিমাণে কোলেস্টেরল থাকে। যাদের রক্তে পূর্বের কোলেস্টেরল পরিমান বেশি তাদের গরুর মাংস কম বা না খাওয়া থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
  • অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে মানবদেহের রক্তে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যা প্রধানত হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গরুর মাংসের চর্বি আমাদের দেহের রক্ত নালীতে জমে এথেরোসক্লেরসিস ঘটাতে পারে যা পরবর্তীতে হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  • মানবদেহে অতিরিক্ত সোডিয়াম ক্ষতিকর। গরুর মাংসে সোডিয়াম থাকে মানব দেহের উচ্চ রক্তচাপ বাড়াতে বা কমাতে ভূমিকা পালন করে। তাই গরুর মাংস প্রতিনিয়ত খেলে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হতে পারে যা হৃদরোগ, কিডনি রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগ সৃষ্টিতে কাজ করে।
  • অতিরিক্ত গরুর মাংস গ্রহণের ফলে কোলন ক্যান্সার হতে পারে। তাই আমরা অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকবো। চিকিৎসকের মতে সপ্তাহে পাঁচ দিন লাল জাতীয় মাংস গ্রহণ করলে কোলন ক্যান্সারের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

গরুর মাংস খেলে কি ওজন বাড়ে জেনে নিন

গরুর মাংসের প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাটি এসিড, চর্বি, কোলেস্টোরল ইত্যাদি থাকে। যা আমাদের দেহের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দিলে আমাদের ওজন কমতে পারে। লাল জাতীয় মাংসে প্রচুর ক্যালরি থাকে। যাদের শরীরে ডায়াবেটিস হৃদরোগ হাইপারটেনশন ও কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত সে সকল রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গরুর মাংস না খাওয়া উত্তম।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমার এই আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। কথাই বলে স্বাস্থ্য সুখের মূল। যদি মানুষের স্বাস্থ্য ভালো না থাকে তাহলে তার সবকিছুই খারাপ থাকে। তাই আমরা প্রতিটি খাবারের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে খাব। নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি সব সময় যত্ন নেব। আশা করি এই আর্টিকেলটি থেকে আপনারা উপকৃত হবেন। পরবর্তীতে যদি কোন বিষয়ে জানতে চান তাহলে আমাকে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।

আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি এবং আপনার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের সাথে আমাদের এই ওয়েবসাইট সম্পর্কে শেয়ার করবেন। নিয়মিত ভিজিট করার জন্য উৎসাহ করবেন। আপনার প্রতিটা মুহূর্ত সুন্দর হোক-আসসালামু আলাইকুম

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url