ধানের বাদামি দাগ রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার - ধানের পাতা ঝলসানো রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ধানের বাদামি দাগ রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার - ধানের পাতা ঝলসানো লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানার জন্য অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন। তাহলে আজকেই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আর্টিকেলটিতে আপনি জানতে পারবেন ধানের বাদামী দাগ রোগের জীবাণুর বৈজ্ঞানিক নাম কি।

ধানের বাদামি দাগ রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার - ধানের পাতা ঝলসানো রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে ধানের বাদামি দাগ রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার - ধানের পাতা ঝলসানো লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নিন।

ভূমিকা

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ আর এই কৃষি প্রধান দেশে সব থেকে যে ফসল বেশি উৎপাদন করা হয় সেটি হচ্ছে ধান। গ্রাম অঞ্চলে এই ধান ব্যাপক পরিমাণে চাষাবাদ করা হয়। আমরা অনেকেই হয়তো ধান চাষ করে থাকি তাই আমাদের ধানের বিভিন্ন ধরনের রোগ সম্পর্কে জেনে থাকা প্রয়োজন। আপনি যদি ধানের রোগের লক্ষণ জেনে থাকেন তাহলে খুব সহজে রোগ নির্ণয় করতে পারবেন। এছাড়াও রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি আপনি ঐ রোগের প্রতিকার ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
এই থেকে আপনার ফসলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। আজকের এই আর্টিকেলটি ধানের দুইটি রোগ সম্পর্কে। আপনার যদি ধানের বাদামি দাগ রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার - ধানের পাতা ঝলসানো লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে না জানা থাকে তাহলে আর্টিকেলটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আশা করব আপনি অবশ্যই উপকৃত হবেন। কেননা রোগ আক্রান্ত ফসলে সঠিক সময় যদি প্রতিকার করা যায় তাহলে বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন।

ধানের বাদামী দাগ রোগের জীবাণুর বৈজ্ঞানিক নাম কি

আমরা অনেকেই ধানের বাদামী দাগ রোগের সাথে পরিচিত না। এছাড়াও আমরা জানি না ধানের বাদামী দাগ রোগের জীবাণুর বৈজ্ঞানিক নাম কি। তাহলে চলুন এখন জেনে নেই ধানের বাদামী দাগ রোগের জীবাণুর বা প্যাথোজেনের নাম

প্যাথোজেন: Drechslera oryzae ও পোষক: Oryza sativa

ধানের বাদামি দাগ রোগের লক্ষণ

ধান একটি বাংলাদেশের প্রধান ফসল। বাংলাদেশের অধিকাংশ জমিতে ধান চাষাবাদ করা যায়। ধানে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রমণ করে থাকে তেমনি একটি রোগ হচ্ছে ধানের বাদামি দাগ রোগ। এখন আপনি জানতে পারবেন ধানের বাদামি রোগের লক্ষণ সম্পর্কে। তাহলে চলুন জেনে নেই ধানের বাদামি দাগ রোগের লক্ষণ কি কি:
  • সর্বপ্রথম ধানের পাতায় ছোট ছোট গোলাকার বাদামি বর্ণের দাগ দেখা যাবে।
  • পরবর্তীতে ওই সকল দাগের চারপাশে হলুদ বর্ণের বলয় সৃষ্টি হয়।
  • কয়েকটি দাগ একত্রিত হয়ে একটি বড় ধরনের দাগ সৃষ্টি করে।
  • ধানের ক্ষেতে যদি এই রোগের তীব্র আক্রমণ হয় তাহলে পাতা শুকিয়ে মারা যায়।
  • পরবর্তীতে ধানের শীষ বের হলে শীষেও স্পোর আক্রমণ করে এবং ছোট ছোট বাদামি বা কালো বর্ণের দাগ ফেলে।
  • রোগের তীব্র আক্রমণে অনেক সময় ধানের শীষ বের হয় না।
  • আবার অনেক ক্ষেত্রে শীষ বের হলে তাতে দানা সৃষ্টি হয় না।
  • আমরা যে কালো বর্ণের ভাত দেখি তা এ রোগের ফলে হয়।
রোগচক্র: রোগের জীবাণু ধানের বীজ ও ক্ষেতের পরিত্যক্ত অংশে বিদ্যমান থাকে। রোগাক্রন্ত বীজ বপন করলে এখান থেকে সৃষ্ট চারা গাছ প্রাথমিকভাবে রোগাক্রান্ত হয়। এ ছাড়া পরিত্যক্ত অংশে বিদ্যমান জীবাণুর কনিডিয়া সুস্থ গাছকে আক্রমণ করে এবং আক্রান্ত অংশ হতে অন্যান্য গাছ গৌণভাবে আক্রান্ত হয়। ফসল উঠানোর পর পরিত্যক্ত অংশে জীবাণু থাকতে পারে, যা পরবর্তী ফসলে আক্রমণ করে। এভাবে এদের রোগচক্র চলে।

ধানের বাদামি দাগ রোগের প্রতিকার

আপনি যদি একজন ধান চাষী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে জানতে হবে। শুধু রোগ সম্পর্কে জানলে হবে না আপনাকে ওই রোগের প্রতিকার সম্পর্কে জানতে হবে তাহলে আপনি খুব সহজেই ওই রোগের প্রতিকার করতে পারবেন। আপনার যদি ধানের বাদামি দাগ রোগের প্রতিকার সম্পর্কে না জানা থাকে তাহলে আর্টিকেলটাতে জেনে নিন।
  • আপনি অবশ্যই ধানের সুস্থ ও রোগমুক্ত বীজ বপন করবেন।
  • ধানের যে বীজ আপনি বাপনের জন্য নির্বাচন করেছেন তা বপনের পূর্ব ছত্রাক বারক (এগ্রোসান জিএন ইত্যাদি) দ্বারা বীজ শোধন করে নিন।
  • বীজ নির্বাচনের অবশ্যই রোগ প্রতিরোধী জাত নির্বাচন করতে হবে। যেমন- বিপ্লব, মুক্তা, প্রগতি ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।
  • একই জমিতে বারবার একই ফসল চাষ না করে শস্য পর্যায়ক্রম অনুসরণ করতে হবে।
  • ফসল তোলার পর জমিতে যে পরিত্যাক্ত অংশ থাকে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  • বিকল্প পোষক বিনষ্ট করতে হবে।
  • জিংক সারের ব্যবহার রোগের শক্তি কমায়।
এছাড়াও আপনি বীজ বপনের পূর্বে ৮-১০ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ৫২°C তাপমাত্রার গরম পানিতে ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখলে রোগের জীবাণু ধ্বংস হবে

ধানের পাতা ঝলসানো রোগের জীবাণুর বৈজ্ঞানিক নাম কি

আমরা অনেকেই ধানের পাতা ঝলসানো রোগের সাথে পরিচিত না। এছাড়াও আমরা জানি না ধানের পাতা ঝলসানো (Blast disease of Rice) রোগের জীবাণুর বৈজ্ঞানিক নাম কি? তাহলে চলুন এখন জেনে নেই ধানের পাতা ঝলসানো রোগের জীবাণু বা প্যাথোজেনের নাম

প্যাথোজেন: Pyricularia oryzae ও পোষক: Oryza sativa

ধানের পাতা ঝলসানো রোগে লক্ষণ

আমরা সব সময় উদ্ভিদের রোগের লক্ষণ দেখে রোগ নির্ণয় করে থাকি। আপনি যদি রোগের লক্ষণ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই খুব তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয় করতে পারবেন এবং এর প্রতিকার করতে পারবেন। তেমন একটি রোগ হচ্ছে ধানের পাতা ঝলসানো রোগ এ রোগের লক্ষণ সম্পর্কে চলুন জেনে নি:
  • প্রথমে ধান গাছের পাতায় ছোট ছোট হালকা সবুজ রঙের দাগ পড়ে।
  • দাগগুলো ক্রমান্বয়ে বড় হয় এবং এর কিনারা বাদামি বর্ণ ও মধ্যভাগ ধূসর বর্ণ ধারণ করে।
  • অনেকক্ষেত্রে একাধিক দাগ একত্রিত হয়ে বড় আকারের দাগের সৃষ্টি করে।
  • দাগগুলো লম্বাকার বা মাকু আকৃতির হয়।
  • তীব্র আক্রমণে সমগ্র পাতায়ই বাদামি বর্ণ ধারণ করে এবং কখনো কখনো পাতা ভেঙে যায়।
  • পাতার উপর দাগ দেখে মনে হয় পাতার ঐ অংশ পুড়ে গেছে, তাই একে পাতা পোড়া রোগ বলে।
  • অনেক সময় কাণ্ডেও এ ধরনের দাগ দেখা দিতে পারে।
  • শীষের গোড়া আক্রান্ত হলে তা গাঢ় বাদামি বর্ণ ধারণ করে এবং শুকিয়ে যায়।
  • শীষ চিটায় পরিণত হয় এবং ভেঙে যায়।
রোগচক্র: ধানের ব্লাস্ট রোগ একটি বীজবাহিত রোগ। ছত্রাকের মাইসেলিয়াম বীজে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। এই বীজ বপন করলে গাছ রোগাক্রান্ত হয় এবং গাছের বৃদ্ধির সাথে সাথে পাতায় ও কাণ্ডে মাকু আকৃতির দাগ সৃষ্টি হয়। অনুকূল আবহাওয়ায় আক্রান্ত স্থানে দ্রুত কনিডিওফোর ও কনিডিয়া উৎপন্ন হয়। কনিডিয়া বাতাসের মাধ্যমে বাহিত হয়ে নতুন গাছকে আক্রমণ করে। - আক্রমণে ৪/৫ দিনের মধ্যে রোগলক্ষণ প্রকাশ পায়।
লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই আক্রান্ত স্থানে পুনরায় কনিডিয়া উৎপন্ন হয় এবং তা বাতাস বা বৃষ্টির ছিটার মাধ্যমে নতুন গাছকে আক্রমণ করে। এভাবে রোগটি চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। এছাড়াও, এ রোগের জীবাণু আক্রান্ত ক্ষেতের মাটিতে, আবর্জনা ও পরিত্যক্ত অংশে অনেকদিন টিকে থাকতে পারে, যা পরবর্তী মৌসুমে আক্রমণ করার জন্য যথেষ্ট।

ধানের পাতা ঝলসানো প্রতিকার বা নিয়ন্ত্রণ

  • সুস্থ ও রোগমুক্ত বীজ বপন করতে হবে।
  • বীজ বপনের আগে বীজ শোধন করে নিতে হবে।
  • গাছের পরিত্যক্ত অংশ ও আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  • শীষ বের হওয়ার পূর্বে পাতা আক্রান্ত হলে কুসুমিন, ব্লাস্টিসিডিন-এস ব্লাস্টিন, হিনোসান ইত্যাদি ছত্রাক বারক ছিটাতে হবে।
  • রোগ প্রতিরোধী জাতের ধান যেমন- কটক তারা, বিপ্লব, জন, মুক্তা, ব্রি-শাইল ইত্যাদি বপন করা উত্তম।
  • শস্য পর্যায়ক্রম অনুসরণ করা উচিত।
  • অতিরিক্ত N, সার বর্জন করতে হবে।
  • নিয়মিত ক্ষেতের আগছা পরিষ্কার করতে হবে।
  • আবহাওয়ার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে; কারণ উষ্ণ, আর্দ্র ও মেঘলা আবহাওয়া এ রোগের জীবাণুর জন্য অনুকূল।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক এতক্ষণ পর্যন্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আর্টিক্যালটির মধ্যে আপনি ধানের বাদামি দাগ রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার - ধানের পাতা ঝলসানো লক্ষণ ও প্রতিকার বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এছাড়াও আপনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে ধান চাষ করতে গেলে অবশ্যই আপনাকে ধানের বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে জানতে হবে।

এছাড়াও আর্টিকেলটিতে এই সকল রোগের জন্য কোন প্যাথোজেন দায়ী প্যাথোজেন দায়ী এই সম্পর্কে জেনেছেন। আশা করবো এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণটি পড়ার মাধ্যমে আপনি অনেকটা উপকৃত হবেন। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ তাই বাংলাদেশের অনেক মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাই আমাদের কৃষির ওপর বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।
এছাড়াও যদি রোগের প্রভাব বেশি দেখা যায় কৃষিবিদ অথবা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে পারেন। আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি এবং আপনার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের সাথে আমাদের এই ওয়েবসাইট সম্পর্কে শেয়ার করবেন। নিয়মিত ভিজিট করার জন্য উৎসাহ করবেন। আপনার প্রতিটা মুহূর্ত সুন্দর হোক দেখা হবে পরবর্তী কোন আর্টিকেলে ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url