আখের লাল পচা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
আখের লাল পচা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে এই আর্টিকেলটিতে জানাবো। আপনি যদি একজন আখ চাষী হয়ে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলটির মধ্যে জানতে পারবেন আখের লাল পচা রোগের কারণসমূহ।
আপনি যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আখের লাল পচা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
আমাদের দেশে আখ একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। আখের রস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করা যায়।এছাড়াও আখের রস আমরা সরাসরি খেয়ে থাকি। আখের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। আখের রস দিয়ে তৈরি গুড় বেশ সুস্বাদু। এই গুড় দিয়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করে থাকি। বর্তমানে আপনি যদি আখ চাষ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে আখের বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে জানতে হবে।
কারণ আপনি আখের রোগ সম্পর্কে জানা থাকলে খুব সহজে ওই রোগের প্রতিকার করতে পারবেন। তেমনই একটি রোগ আখের লাল পচা রোগ। আজকে এই আর্টিকেলটির মধ্যে আমি আপনাদেরকে লাল পচা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছি। আপনি যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়েন তাহলে আখের লাল পচা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং এই থেকে আপনি আশা করি বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।
আখের লাল পচা রোগের প্যাথোজেন
আপনি যদি একজন চাষী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে আখের বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে জানতে হবে। উদ্ভিদের প্রতিটি রোগের জন্য আলাদা আলাদা প্যাথোজেন দায়ী। তাই এখন আপনি জানতে পারবেন আখে লাল পচা রোগের জন্য কোন প্যাথোজেন দায়ী। আখে লাল পচা রোগের নাম হলো: Colletotrichum falcatum.
আখের লাল পচা রোগের লক্ষণ
আপনি যদি আখের লাল পচা রোগের লক্ষণ সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে এখন এই আর্টিকেলটির মধ্যে আখের লাল পচা রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানতে পারবেন। মানুষের কোন রোগ হলে আমরা মুখে প্রকাশ করতে পারি। অন্যান্য প্রাণীর কোন রোগ হলে তার আচার-আচরণ দেখে তা নির্ণয় করা হয়। কিন্তু উদ্ভিদের রোগ হলে যতক্ষণ পর্যন্ত না তার লক্ষণ প্রকাশ পাবে ততক্ষণ পর্যন্ত রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না।
তাই প্রতিটা রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানা থাকলে খুব সহজেই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়। তাই আপনি আখের লাল পচা রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানা থাকলে খুব সহজেই এই প্রতিকার করতে পারবেন। নিম্নে আখের লাল পচা রোগের লক্ষণ দেয়া হলো।
- প্রথমে আখের ডগার দিকের কচি পাতাগুলো ফ্যাকাশে হয়ে যাবে।
- পাতার নতুন শিরা বরাবর লাল দাগ দেখা যায়
- পরবর্তীতে লাল দাগের উপর কালো কালো বিন্দু দেখা যায়। এই সকল বিন্দুগুলোতে অসংখ্য কনিডিয়া জন্মে থাকে।
- আখ গাছের শীষ হতে ৩য় ও ৪র্থ পাতা শুকিয়ে যায়।
- পরে অন্যান্য পাতা ও আগা হতে কিনারা বরাবর শুকাতে থাকে।
- আপনি যদি আক্রান্ত গাছের কাণ্ড লম্বালম্বিভাবে ছিড়েন তাহলে বিস্তীর্ণ অঞ্চলব্যাপী লাল দাগ দেখা যাবে।
- অনেক কারণেই কাণ্ডে লাল দাগ দেখা দিতে পারে কিন্তু শুধুমাত্র লাল পচা রোগের ক্ষেত্রে লাল দাগের উপর আড়াআড়িভাবে সাদা সাদা অংশ বিদ্যমান থাকে।
- রোগ যত বৃদ্ধি পবে সাথে সাথে গাছের কাণ্ড স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলবে
- আখের দুই গিটের মধ্যবর্তী স্থান সংকুচিত হয়ে যায় এবং ছোট হয়ে যাবে।
- যদি এই রোগের তীব্র আক্রমণে হয় তাহলে ভিতরের কাণ্ড সম্পূর্ণরূপে পচে যেতে পারে।
- আখের রস খাওয়ার সময় দুর্গন্ধযুক্ত হয়।
- আখের ফলন ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। এই থেকে কৃষক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আখের লাল পচা রোগের রোগ চক্র
আপিন যদি রোগাক্রান্ত গাছের অংশ বীজ হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন তাহলে তা হতে যে গাছ হবে তা হবে রোগাক্রান্ত । রোগাক্রান্ত গাছের পাতার মধ্যশিরায় কনিডিয়া/স্পোর উৎপন্ন হয়। স্পোর বাতাস, বৃষ্টির পানি ইত্যাদির মাধ্যমে বাহিত হয়ে নতুন গাছের কোনো ক্ষতস্থানে বা কচি পাতার পড়ে এবং সেখানে স্পোর অঙ্কুরিত হয়ে কোষদেহে প্রবেশ করে এবং রোগ সৃষ্টি করে। আক্রান্ত গাছে পুনরায় কনিডিয়া উৎপন্ন হয় এবং তা নতুন গাছে রোগ সংক্রমণ হয়। এইভাবে প্রতিনিয়ত আখের লাল পচা রোগের রোগচক্র চলতে থাকে।
আখের লাল পচা রোগের প্রতিকার
আপনি হয়তো আর্টিকেলটির ওপরের অংশ হতে জানতে পেরেছেন আখের লাল পচা রোগের লক্ষণ সম্পর্কে। এখন আপনি যদি আখের লাল পচা রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জেনে শুধু থেকে যান তাহলে হবে না। এই রোগে প্রতিকার সম্পর্কেও আপনাকে জানতে হবে। আপনি যদি আখের লাল পচা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে থাকেন তাহলে খুব সহজে রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। তাই আসুন আর দেরি না করে আখের লাল পচা রোগের প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নিন।
- আখের লাল পচা রোগের প্রতিকার করতে হলে প্রথমে আপনাকে সুস্থ সবল রোগমুক্ত কাণ্ড বীজ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
- বীজ লাগানোর পূর্বে অবশ্যই ছত্রাক বারক দিয়ে বীজ শোধন করে নিবেন। এক্ষেত্রে এরাটন-৬ নামক ছত্রাক বারক ব্যবহার করা হয়।
- কোন গাছে যদি রোগে আক্রমণ করে তাহলে অবশ্যই ওই আক্রান্ত ফসলের পরিত্যক্ত অংশ বিনষ্ট করতে হবে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- কোনো গাছে রোগ লক্ষণ দেখা দিলে ঐ গাছ গোড়াসহ তুলে পুড়ে ফেলতে হবে।
- আখের যে সকল রোগ প্রতিরোধক্ষম জাত রয়েছে ওই সকল আখ চাষ করা উচিত।
- শস্যবর্তন পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত অর্থাৎ একই জমিতে প্রতিবার আখ চাষ না করে ভিন্ন ভিন্ন মৌসুমে ভিন্ন ভিন্ন ফসল চাষ করতে হবে।
- আর লাগানোর পূর্বে জমিতে পরিমিত সার দিয়ে মাটি জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
- আপনি চাইলে আখ গবেষণা কেন্দ্রের সুপারিশকৃত আখ লাগানো পারেন। এই থেকে আপনি রোগমুক্ত বীজ পাবেন ও অধিক ফলন উৎপাদন করে বেশি লাভবান হতে পারবে।
আখের সবচেয়ে মারাত্মক রোগ কোনটি
আগের বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক রোগ রয়েছে। এ সকল রোগ যদি আপনার আখ ক্ষেতে আক্রমণ করে তাহলে ফলন কমে যেতে পারে। নিম্নে বিভিন্ন রোগের নাম উল্লেখ করা হলো:
- আখের খোল পঁচা রোগ
- আখের আংটি দাগ রোগ
- আখের মোজাইক রোগ
- আখের চক্ষু দাগ রোগ
- আখের সাদা পাতা রোগ
- আখের কালো শীষ রোগ
- আখের সুটিমোল্ড রোগ
- আখের বীজ পঁচা রোগ Seed Rot of Sugarcane
- আখের উইল্ট রোগ Wilt of Sugarcane.
- আখের পাতার লাল ডোরা দাগ/ডগা পচা রোগ
- আখের লাল পচা রোগ
- আখের পাতার লাল দাগ রোগ
আপনি যদি আখ চাষী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে উপরেও উল্লেখিত সকল রোগ সম্পর্কে জানতে হবে। আপনি যদি সকল রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে পারেন তাহলে খুব সহজেই আখ ক্ষেতের রোগ নির্ণয় করতে পারবেন।
আখের বৈজ্ঞানিক নাম কি
আখের বৈজ্ঞানিক নাম কি হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। প্রতিটা উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম রয়েছে। এখন আপনাকে জানাবো আখের বৈজ্ঞানিক নাম সম্পর্কে।
স্থানীয় নামঃ আখ
বৈজ্ঞানিক নামঃ Saccharum officinarum
লেখকের মন্তব্য | আখের লাল পচা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ পর্যন্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আর্টিক্যালটির মধ্যে আপনি আখের লাল পচা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এছাড়াও আপনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে আখ চাষ করতে গেলে অবশ্যই আপনাকে আখের বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে জানতে হবে। এছাড়াও আর্টিকেলটিতে আখের লাল পচা রোগের জন্য কোন প্যাথোজেন দায়ী এই সম্পর্কে জেনেছেন।
আখের লাল পচা রোগ একটি মারাত্মক ধরনের রোগ এই রোগে আক্রান্ত হলে আপনার ফসলের ফলন কমিয়ে দেয়। তাই আখের লাল পচা রোগের লক্ষণ দেখা মাত্র কৃষিবিদ অথবা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে পারেন। আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি এবং আপনার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের সাথে আমাদের এই ওয়েবসাইট সম্পর্কে শেয়ার করবেন। নিয়মিত ভিজিট করার জন্য উৎসাহ করবেন। আপনার প্রতিটা মুহূর্ত সুন্দর হোক দেখা হবে পরবর্তী কোন আর্টিকেলে ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকুন।
এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url