বেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

বেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য হয়তো আপনি চেষ্টা করছেন। তাই আমার আর্টিকেলটি বেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়াও ঐ আর্টিকেলটির মধ্যে আপনি বেল এর বৈজ্ঞানিক নাম জানতে পারবেন।
বেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এছাড়াও বিভিন্ন রকমের ঔষধি গুন। আপনি যদি বেল খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ভূমিকা

অন্যান্য ফলের মত বেল একটি উপকারী ফল। বেল খাওয়ার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে। বেলে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। এছাড়াও বেলের সমগ্র উদ্ভিদ ব্যবহার হয়ে থাকে। কাঁচা বেল ও পাকা বেল দুই ধরনের বেল খাওয়া যায়। নিয়মিত বেল খেলে পুরাতন আমাশয়, কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আপনি যদি নিয়মিত বেল না খেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই বেলের সিজনে নিয়মিত বেল খাবেন। এ আর্টিকেলটির মধ্যে আপনি বেলের বৈজ্ঞানিক নাম সহ বেল পাতার বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক আপনি বেল খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে জানতে আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

বেল গাছের বৈশিষ্ট্য

আমরা প্রায় কমবেশি সকলেই বেলগাছ দেখেছি। তবুও আমার এই আর্টিকেলটির মধ্যে বেল গাছের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরবো। যাতে করে আপনারা সহজেই বেলগাছ চিনতে পারেন।
  • বেল সাধারণত বহু বর্ষজীবী কাষ্ঠল জাতীয় উদ্ভিদ।
  • গাছের গঠন মসৃণ। গাছ শাখা প্রশাখাযুক্ত।
  • বেল গাছের পাতা শীতকালে ঝরে যায় এবং বসন্তকালে নতুন পাতা জন্মায়।
  • বেল গাছের পাতা জালিকা শিরবিন্যাসযুক্ত।
  • বেলের ফুল ছোট ও তীব্র সুগন্ধি যুক্ত।
  • ফল সাধারণত গোল এবং এর ওপরের অংশ শক্ত।
  • বেল গাছের সামগ্র উদ্ভিদ উপকারী হিসাবে ব্যবহার হয়ে থাকে।

বেল খাওয়ার উপকারিতা

প্রতিটি ফলের উপকারী দিক রয়েছে। তেমনি বেল খাওয়ার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে। এখন আপনাকে জানানোর চেষ্টা করব বেল খাওয়ার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা সম্পর্কে। নিম্নের বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরা হলোঃ

ক্যান্সার কমাতেঃ বেলে রয়েছে অ্যান্টি প্রলেফিরেটিভ ও অ্যান্টি মুটাজেন উপাদান যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই উপকারী।

হজমেঃ বেল হজমে খুবই উপকারী ভূমিকা পালন করে। আপনার যদি হজমের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই বেল খেতে পারেন।

কোষ্ঠকাঠিন্যঃ বেলের ঔষধি গুনাগুনের মধ্যে এটি একটি। আপনারা যারা কোষ্ঠকাঠিন্যতে ভুগেন তাদের জন্য বেল একটি মহা ঔষধ। নিয়মিত বেলের শরবত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।

হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতেঃ পাকা বেল এর শরবত অনেক ঠান্ডা হয়ে থাকে। তাই তীব্র গরমে বেলের শরবত খেলে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।

দৃষ্টি শক্তি বাড়াতেঃ অন্যান্য ভিটামিনের মত বেলে ভিটামিন এ থাকে। আর ভিটামিন এ আপনার দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখবে।

রক্ত সঞ্চালনেরঃ মানবদেহে প্রতিনিয়ত রক্ত সঞ্চালন হয়। বেল মানব দেহ থেকে দূষিত পদার্থ বের করে ফেলে এবং দেহের রক্ত সঞ্চালনের স্বাভাবিক করে তোলে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেঃ বেলে থাকে ভিটামিন সি আর এই ভিটামিন সি আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে।

ত্বক মসৃণঃ নিয়মিত বেল খেলে আপনার ত্বক মসৃণ ও ব্রণ মুক্ত থাকবে।
ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দমনেঃ বেলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে বাধা দিয়ে ব্যাকটেরিয়া ঘটিত ডায়রিয়া থেকে উপশম পাওয়া যায়।

পুরাতন আমাশয়েঃ বেল আপনার দেহে থাকা পুরাতন আমাশয় ভালো করে।

উদারাময় নিরাময়ঃ শুকনা বেলের গুড়া ব্যবহারে উদারাময় রোগ থেকে নিরাময় পাওয়া যায়।

ডায়াবেটিক কমাতেঃ মেথানল নামক একটি উপাদান থাকে পাকা বেলে। যা আপনার দেহের ব্লাড প্রেসার কমাতে ভূমিকা রাখবে। টাকা দিলে শরবত খেলে এর কার্যকারিতা পাওয়া যাবে না শুধুমাত্র বেল খেতে হবে। ডায়াবেটিস কমাতে মেথানল বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

এনার্জি বাড়াতেঃ বেল শরীরের এনার্জি ধরে রাখে। ১০০ গ্রাম বেলের মধ্যে ১৪০ ক্যালোরি এনার্জি পাওয়া যায়।

বেল খাওয়ার সঠিক নিয়ম

বেল খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি আমাদের জানা উচিত বেল খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে। প্রতিটি খাবারের সঠিক নিয়ম রয়েছে আপনি যদি সঠিক নিয়ম না জেনে খাবার খান তাহলে অবশ্যই বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন। তাহলে চলুন এখন বেল খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে নি।

বেল খাওয়ার উপযুক্ত সময় হিসেবে দুপুরের খাবারের পর থেকে রাতের খাবার আগ পর্যন্ত খেতে পারেন। এছাড়াও আমাদের দুপুরের আগে বিভিন্ন ধরনের কাজ থাকে এই কাজ শেষে যদি আপনি এক গ্লাস বেলের শরবত খেতে পারেন তাহলে বিশেষ উপকার পাবেন এবং আপনার ক্লান্তি দূর হবে। শরবত ছাড়াও বেল খাওয়া যায়।
কাঁচা বেল খাওয়ার নিয়মঃ কাঁচা বেল খাওয়ার মধ্যে গরম পানিতে সিদ্ধ করে খাওয়ার প্রক্রিয়া একটি সঠিক নিয়ম। আপনি এমন একটি বেল নিতে হবে যেটি কয়েকদিনের মধ্যে পেকে যাবে। একটি পাত্রে পানি নিয়ে কিছুক্ষণ ফুটাতে হবে ওই পানিতে বেল দিতে হবে কিছুক্ষণ রাখার পরে দেখা যাবে বেলটি সিদ্ধ হয়ে গেছে। সিদ্ধ বেলটি পাকা বেলের মতো একটু সুন্দর গন্ধ পাওয়া যাবে।

এখন আপনি বেলের কিছু অংশ অথবা পুরো বেলটি দিয়ে শরবত তৈরি করতে পারেন। শরবত তৈরির জন্য আপনি আপনার প্রয়োজন মতো পানি ব্যবহার করতে পারেন। এরপর পুরো বেলটি চামচ দিয়ে তুলে পানির ভেতরে দিন। এ সময় বেলের আঁশ ও বেলের দানা আলাদা করে নিতে পারেন। এরপর ভালোভাবে মিশিয়ে পান করুন। কাঁচা বেল যদি আপনি এভাবে খান তাহলে পাকা বেলের মতোই উপকার পাবেন।

গর্ভাবস্থায় পাকা বেল খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় একটি মায়ের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির প্রয়োজন পড়ে। তাই সবসময় গর্ভাবস্থায় শাকসবজি সহ বাড়তি পুষ্টির জন্য খাবার খেতে হয়। তেমন একটু উপকারী ফল বেল। যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে থাকে। গর্ভাবস্থায় বেল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে গর্ভাবস্থায় নিয়মমাফিক বেল খাওয়া যাবে। তবে আপনি অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বেল খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ অতিরিক্ত মাত্রায় বেল খেলে আপনার ও পেটের সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। তাই অবশ্যই কোন কিছু খাওয়ার আগে আপনি সচেতন থাকবেন।

বেল এর বৈজ্ঞানিক নাম

উদ্ভিদ প্রাণিসহ প্রতিটি প্রজাতির একটি বৈজ্ঞানিক সম্পূর্ণ নাম রয়েছে। যার দ্বারা বিশ্ববাজারে পরিচিতি পাই। তেমনি বেলের বৈজ্ঞানিক নাম রয়েছে। নিম্নে বেলের বৈজ্ঞানিক নাম দেয়া হলোঃ

বেলের স্থানীয় নামঃ বেল
বেলের বৈজ্ঞানিক নামঃ Aegle marmelos
বেলের গোত্রের নামঃ Rutaceae

বেল পাতার ব্যবহার

বেল খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি বেলপাতারও বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার রয়েছে। এখন আপনি জানতে পারবেন বেল পাতার বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার।
  • বেলে পাতায় ফাঙ্গাল, প্যারাসাইট গুণ রয়েছে যা আপনার হজমের জন্য সহায়তা করবে।
  • আপনি প্তাহে ২ থেকে ৩ বেল পাতা খেলে পেট ব্যথা, গ্যাস, ডায়রিয়া এবং পেট খারাপের সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়।
  • বেল ভিটামিন সি এর ভালো উৎস। ভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়। বেল পাতার রস সেই রোগের জন্য উপকারী।
  • বেলে বিটা ক্যারোটিন থাকে যা যকৃতকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • মেয়েদের পিরিয়ডের সময় বেশি রক্তপাত হলে পাতার রস খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • যে নারীরা স্তন্যপান করান, তাদের শরীরে দুধের উৎপাদন বাড়াতে বেল পাতার রসের উপকারিতা রয়েছে।
  • ধর্মীয় কাজে বেল পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

বেল খাওয়ার অপকারিতা

বেল খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা রয়েছে। তাই আপনি অবশ্যই বেল খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেবেন। আপনি হয়তো অবগত থাকবেন কোন খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। তেমনি বেল একটি আপনি যদি বেল অতিরিক্ত মাত্রায় খান তাহলে ক্ষতির সম্মুখন হতে পারেন। পাকা বেল অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে আপনার দেহে অন্ত্রের ছিদ্র পর্যন্ত হতে পারে। কাঁচা বেল খেলে এ ধরনের সমস্যা হয় না। আবার পাকা বেল অতিরিক্ত খেলে পেটে প্রচন্ড দুর্গন্ধ হয়।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক এতক্ষণ পর্যন্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আর্টিক্যালটির মধ্যে আপনি বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এছাড়াও আপনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে বেল শুধু মানব দেহের জন্যই নয় সাথে গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভূমিকা অনেক। সম্পূর্ণ আর্টিকেল থেকে আপনি যে তথ্যগুলো পেয়েছেন আশা করি আপনাদের শারীরিকভাবে অনেক সমস্যা দূর করতে ব্যবহার করবেন এবং আপনার খাদ্য তালিকায় বেলের সিজনে বেল যোগ করবেন।
আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি এবং আপনার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের সাথে আমাদের এই ওয়েবসাইট সম্পর্কে শেয়ার করবেন। নিয়মিত ভিজিট করার জন্য উৎসাহ করবেন। আপনার প্রতিটা মুহূর্ত সুন্দর হোক দেখা হবে পরবর্তী কোন আর্টিকেলে ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url