সফটওয়্যার কি - সফটওয়্যার কত প্রকার ও কি কি বিস্তারিত জানুন
সফটওয়্যার কি - সফটওয়্যার কত প্রকার ও কি কি সম্পর্কে আপনি হয়তো অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন। তাই এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আর্টিকেলটিতে আপনি আরো জানতে পারবেন সিস্টেম সফটওয়্যার কি ও সিস্টেম সফটওয়্যার কত প্রকার এই সম্পর্কে।
আমরা আমাদের হাতে থাকা ডিভাইস গুলোতে যে সকল সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকি সে সকল সফটওয়্যার গুলোকে সাধারণত এপ্লিকেশন সফটওয়্যার বলা হয়। আর এই সকল কিছু জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
বর্তমানে যে কোন একটি ডিভাইস ব্যবহার করেনা এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। আর এই সকল ডিভাইস যার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় সেগুলোই হচ্ছে সফটওয়্যার। বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার রয়েছে যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার হয়। এছাড়াও অফিস, আদালত, ব্যাংক, হাসপাতাল ইত্যাদি সহ সব জায়গায় সফটওয়্যার এর ব্যবহার ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।
সফটওয়্যার এর সুবিধার মধ্যে একটি সুবিধা হচ্ছে সফটওয়্যার কে সবসময় ব্যবহারকারীর প্রয়োজনমতো তৈরি করা যায়। আমরা হয়তো সবাই অবগত আছি যে একটি ডিভাইস দুইটি অংশ নিয়ে তৈরি করা হয়। ০১. সফটওয়্যার(Software) ২. হার্ডওয়্যার (Hardware)। আমার আজকেরে আর্টিকেলটিতে সফটওয়্যার কি - সফটওয়্যার কত প্রকার ও কি কি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। প্রিয় পাঠক সফটওয়্যার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আপনি অবশ্যই আমার এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সফটওয়্যার কি
কম্পিউটারের সাহায্যে কোন সমস্যা বা কার্য সম্পাদনের উদ্দেশ্যে কম্পিউটারের বোধগম্য ভাষায় ধারাবাহিকভাবে সাজানো নির্দেশমালাকে সফট্ওয়্যার বলা হয়। সফট্ওয়্যারকে প্রোগ্রাম বা কর্মসূচীও বলা হয়। সফট্ওয়্যারগুলো কম্পিউটারের প্রাণস্বরুপ এবং এর মাধ্যমেই কম্পিউটার হার্ডওয়্যাররের কার্যপদ্ধতি সমূহকে সচল করে তার অভ্যন্তরীণ কাজ সুষ্ঠ- সুন্দরভাবে সম্পাদন করে।
এর কর্ম-নির্দেশসমূহ কম্পিউটারের স্মৃতিতে সঞ্চিত করে রাখা হয়। সফট্ওয়্যারের প্রভাবেই কম্পিউটার একটি সাধারণ ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র থেকে পৃথক গাণিতিক শক্তি সম্পন্ন বুদ্ধিমান যন্ত্রের রুপ লাভ করে। যার দ্বারা একটি মানুষ খুব সহজে কম্পিউটারের ভাষা বুঝতে পারি বা কম্পিউটার মানুষের নির্দেশিত কাজ করতে পারে।
সফটওয়্যার কত প্রকার ও কি কি
আমরা সফটওয়্যারের নাম শুনে থাকি কিন্তু সফটওয়্যার কত প্রকার সেটা হয়তো জানি না। এখন আপনাকে সফটওয়্যার কত প্রকার এ সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব। প্রধানত কম্পিউটার সফট্ওয়্যারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা- ১
- সিস্টেম সফট্ওয়্যার (System Software) এবং
- এপ্লিকেশন সফট্ওয়্যার (Application Software)।
এই প্রধান দুইটি সফটওয়্যার দ্বারা কোন ডিভাইস পরিচালিত হয়ে থাকে।
সিস্টেম সফটওয়্যার কি
সিস্টেম সফট্ওয়্যার কে অপারেটিং সিস্টেম বলা হয়ে থাকে। সিস্টেম সফটওয়্যার কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এবং এ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামের মধ্যে কাজের যোগসুত্র রচনা করে। সিস্টেম সফট্ওয়্যার এতটাই ক্ষমতার সম্পূর্ণ যে এটি কে মানুষের মস্তিষ্কের সাথে তুলনা করা যায়। সিস্টেম সফট্ওয়্যার আপনার ডিভাইসের সকল হার্ডওয়্যার ও সফট্ওয়্যারকে নিয়ন্ত্রণ, তত্ত্বাবধান এবং প্যাকেজ সফট্ওয়্যারগুলোকে পরিচালনাও কার্যকারী করতে সহায়তা ও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
একটি কম্পিউটারে সিস্টেম সফট্ওয়্যার ছাড়া সম্পূর্ণভাবে অচল অর্থাৎ কম্পিউটার চলতে পারে না। একটি কম্পিউটারের আকার, আকৃতি ও সংগঠনের উপর সিস্টেম সফট্ওয়্যারের ব্যাপ্তি, ক্ষমতা ও দক্ষতা নির্ভরশীল করে। আপনার ডিভাইস অর্থাৎ কম্পিউটার কি পরিমাণ কাজের ক্ষমতা সম্পন্ন তার ওপর ভিত্তি করে সিস্টেম সফট্ওয়্যার তৈরি করা হয়।
তাই একেক রকম কাজের জন্য সিস্টেম সফট্ওয়্যার একেক রকম হয়ে থাকে। একটি কম্পিউটারের উপযোগী করে তৈরিকৃত সফটওয়্যার আপনি চাইলে অন্য কম্পিউটারে ব্যবহার করতে পারবেন না যতক্ষণ না পর্যন্ত সফটওয়্যার পরিবর্তন করছেন। আপনি সফটওয়্যার পরিবর্তন করে নিলে অন্য কম্পিউটারে ব্যবহার করতে পারবেন।
সিস্টেম সফটওয়্যার কত প্রকার ও কি কি
আপনি হয়তো এতক্ষণে সিস্টেম সফটওয়্যার সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এখন সিস্টেম সফটওয়্যার কত প্রকার ও কি কি বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব। সিস্টেম সফটওয়্যার কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা
- সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম।
- সিস্টেম সাপোর্ট প্রোগ্রাম।
- সিস্টেম ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম।
সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামঃ সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম দিয়ে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, ডেটা এবং নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যার ফলে কম্পিউটারের যাবতীয় কিছু নিয়ন্ত্রণে থাকে। সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম কয়েকটি ইউনিট নিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। যা নিম্নের দেয়া হলো।
- অপারেটিং সিস্টেম (Operating System)
- ডেটাবেস ম্যানেজমেন্ট (Database Management System)
- নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট (Network Management System)
সিস্টেম সাপোর্ট প্রোগ্রামঃ সিস্টেম সাপোর্ট প্রোগ্রাম কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণকারী এর সাহায্যে সার্ভিস প্রোগ্রাম, নিরাপত্তা প্রদানের প্রোগ্রামের কাজ সম্পাদন করে। এছাড়াও যাবতীয় কাজের হিসাব নিকাশ ইত্যাদি কাজ ক্ষমতা রাখে। সিস্টেম সাপোর্ট প্রোগ্রাম নিম্নলিখিত প্রোগ্রামগুলো নিয়ে গঠিত হয়ে থাকে।
- সিস্টেম ইউটিলিটি প্রোগ্রাম,
- সিস্টেম পারফরমেন্স মনিটর প্রোগ্রাম ও
- সিস্টেম সিকিউরিটি মনিটর প্রোগ্রাম।
সিস্টেম ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামঃ সিস্টেম সফটওয়্যারের প্রকারভেদের মধ্যে এটি একটি। এই প্রোগ্রামটি কম্পিউটার ব্যবহারকারীর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান করে। ব্যবহারকারীর সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে ছাড়াও সিস্টেম ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর ভাগগুলো হলো-
- প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রান্সলেটর বা অনুবাদক প্রোগ্রাম,
- প্রোগ্রামিং এডিটর ও টুলস এবং
- কম্পিউটার এইডেড সফট্ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং (CASE= Computer Aided software Engineering) প্যাকেজসমূহ।
৫টি সিস্টেম সফটওয়্যার এর নাম
কম্পিউটারের সাধারণত বিভিন্ন ধরনের সিস্টেম সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য সিস্টেম সফটওয়্যার এর নাম নিচে দেওয়া হল।
- Utility software.
- System servers.
- Device drivers.
- Operating system (OS)
- Windows/graphical user interface (GUI) systems.
- Android
- Computer language translators
- debuggers
- BIOS
- Assembler
এপ্লিকেশন সফট্ওয়্যার (Application Software) কি বা কাকে বলে
একজন কম্পিউটার ব্যবহারিকারীর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য বা ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহৃত প্রোগ্রামকে এপ্লিকেশন সফটওয়্যার বলে। এপ্লিকেশন সফটওয়্যার মূলত কিছু নির্দিষ্ট কাজ অর্থাৎ যে কাজের উপরে সফটওয়্যারটিকে তৈরি করা হবে সেই কাজটি সম্পাদন করবে। বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য এসব প্রোগ্রাম বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা হয়। এপ্লিকেশন সফট্ওয়্যার (Application Software) এ কিছু High level Language থাকে। যেমন, C, Java, VB. Net ইত্যাদির। এর দ্বারা সরাসরি User-Specific-Software যেগুলোকে তৈরি করা হয় যা ব্যবহারকারীর প্রয়োজনীয়তা এবং চাহিদার পূরণ করে থাকে।
এপ্লিকেশন সফটওয়্যার কত প্রকার ও কি কি
প্রিয় পাঠক আপনি হয়তো অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন। এখন অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার এর বিভিন্ন প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করব।এপ্লিকেশন সফট্ওয়্যার দুই ভাগে ভাগ করা যায়-
- সাধারণ এপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ও
- এপ্লিকেশন স্পেসিফিক বা ব্যবহার সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম।
সাধারণ এপ্লিকেশন প্রোগ্রামঃ আমরা প্রাত্যহিক জীবনে কম্পিউটার দ্বারা যে সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ কাজ গুলো করে থাকি যেমন- ওয়েব ব্রাউজিং, ই-মেইল, ওয়ার্ড প্রসেসিং, ডেস্কটপ পাবলিশিং ইত্যাদি। এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ইত্যাদি সাধারণ এপ্লিকেশন প্রোগ্রামের উদাহরণ। আমরা আমাদের হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ইন্সটল করে কাজ করতে পারি।
এপ্লিকেশন স্পেসিফিক বা ব্যবহার সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রামঃ কোন বিশেষ সুনির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত নির্দিষ্ট প্রোগ্রামকে এপ্লিকেশন স্পেসিফিক বা ব্যবহার সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম বলে। যেমন একাউন্টিংয়ের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের একাউন্টিং সফট্ওয়্যার, ইলেকট্রনিক কমার্স, পে-রোল সিস্টেম ইত্যাদি এপ্লিকেশন স্পেসিফিক প্রোগ্রাম এর উদাহরণ।
এপ্লিকেশন সফটওয়্যার এর বৈশিষ্ট্য
আমরা প্রতিনিয়ত যে সকল কাজ করে থাকি যেমন- Word Processing , Photo Editing , Multimedia Software, ইন্টারনেট ব্রাউজার ইত্যাদির গুরুত্বপূর্ণ কাজ অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার এর মাধ্যমে হয়।একজন কম্পিউটার ব্যবহারকারীর কোন কোন ফিচার গুলো প্রয়োজন সে সকল ফিচারগুলো ইচ্ছামত ব্যবহার করা যায় এপ্লিকেশন সফটওয়্যার এর মাধ্যমে।
তাই এপ্লিকেশন সফটওয়্যার এর স্টোরেজের স্পেস বেশি প্রয়োজন হয়। অফিস আদালতের বিভিন্ন ধরনের কাজ এই অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার এর মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার একজন কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহারকারী খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারে।
এপ্লিকেশন সফটওয়্যার এর নাম
বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার রয়েছে। যার মধ্য থেকে অল্প কিছু অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার এর নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
- Microsoft Office
- Adobe Photoshop
- Video Editors
- VLC Media Player
- Google chrome
- File Converter
- Skype
- Team Viewer
- Text Editor
- Different Types of Management System Software
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন সফটওয়্যার কি - সফটওয়্যার কত প্রকার ও কি কি সম্পর্কে। জানতে পেরেছেন বিভিন্ন প্রকার সফটওয়্যার এর নাম। আমাদের ব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি উপরোক্ত আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন।
আরো পড়ুনঃ কম্পিউটারে স্ক্রিনশটস নেওয়ার নিয়ম - কপিরাইটিং কি - প্লেজারিজম (Plagiarism) কি বিস্তারিত জানুন
আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি এবং আপনার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের সাথে আমাদের এই ওয়েবসাইট সম্পর্কে শেয়ার করবেন। নিয়মিত ভিজিট করার জন্য উৎসাহ করবেন। আপনার প্রতিটা মুহূর্ত সুন্দর হোক-আসসালামু আলাইকুম
এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url